• দৌরাত্ম্যে নাজেহাল ঝাড়গ্রাম, ইমেজ হারাচ্ছে ‘প্রিয়’ রামলাল
    এই সময় | ১৯ মে ২০২৫
  • বুদ্ধদেব বেরা, ঝাড়গ্রাম

    ‘আদর দিয়ে দিয়ে বাঁদর তৈরি হচ্ছে’-দস্যি-দামালদের উদ্দেশে কথাটা প্রায়ই ছিটকে আসে। কিন্তু রামলালকেও যে সে কথা শুনতে হবে, কে জানত! তা ছাড়া রামলাল তো আর বাঁদর নয়, হাতি। অথচ তারই দৌরাত্ম্যে বিরক্ত ঝাড়গ্রাম বলছে, ‘রামলালটা দিন দিন একেবারে গোরুর মতো আচরণ করছে। দৌরাত্ম্যের বহরে সে তার ইমেজও হারাচ্ছে।’

    ঝাড়গ্রামে রামলালের গতিবিধি অবাধ। পথেঘাটে চলাফেরা করতে করতে চালটা, মূলোটা অনায়াসেই জুটে যায়। সকলেই তাকে বেশ ভালোওবাসে। কিন্তু গত কয়েক মাসে তার এই অবাধ চালচলনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন ঝাড়গ্রামের বাসিন্দারা। আপাত শান্ত স্বভাবেরই হাতি রামলাল। কিন্তু সেই শান্ত রামলালের দৌরাত্ম্য এখন মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে।

    কী সেই দৌরাত্ম্য?

    রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে বাড়ি থেকে টেনে নিচ্ছে চালের বস্তা, যখন তখন বাগানে ঢুকে আম, জাম, কাঁঠাল খেয়ে যাচ্ছে, ফসলি জমির উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে- সে এক লম্বা ফিরিস্তি। রবিবার তো সে এক আজব কাণ্ড ঘটিয়েছে।

    এলাকার ব্যস্ত রাস্তা লোধাগুলি-ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়ক। সেখানে সকাল থেকে আরও দুই স্যাঙাত জুটিয়ে রাস্তার মাঝে ঘণ্টা দুয়েক দাঁড়িয়েছিল রামলাল। সে পথে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দু’দিকে সাইকেল, গাড়ি, মোটরবাইক, ট্রাক সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। শেষে লোধাশুলি রেঞ্জের কর্মীরা টিন বাজিয়ে রামলালকে সরিয়ে দেয়।

    এমনটা এই প্রথম বার নয়, গ্রামবাসীদের অভিযোগ, শালবনির একটি পেট্রল পাম্পে খাবারের সন্ধানে যখন-তখন হানা দেয় রামলাল। তার ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকেন পাম্পের কর্মীরা। পাম্পের ম্যানেজার অরুণকুমার রথের অভিযোগ, ‘রামলাল মাঝে-মধ্যেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ছে। খাবারের সন্ধানে ঢুকে পড়ছে। জানেন, পাম্পের পাঁচিলটাও ভেঙে দিয়েছে!’

    বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের দলমা থেকে কোনও এক দলের সঙ্গে ঝাড়গ্রামে এসে দলছুট হয়ে যায় রামলাল। তার পরে প্রায় সাত-আট বছর ধরে ঝাড়গ্রাম ও লোধাশুলি রেঞ্জেই ঘোরাফেরা করে সে। মাঝে মধ্যে ওডিশা, ঝাড়খণ্ড, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরে গেলেও কয়েকদিন পরে ফে র লোধাশুলি রেঞ্জের গড় শালবনি এলাকায় ফিরে আসে। তার সঙ্গে এলাকার মানুষজনের একটা ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

    গড় শালবনিতে তিন-চারটে হোটেল, হোম-স্টে এবং বেসরকারি স্কুল রয়েছে। এক হোম-স্টের মালিক বলেন, ‘ রামলাল মাঝে মধ্যেই আমাদের এখানে আসে। চৌবাচ্চায় রাখা জল খায়। গাছের ডাল ভেঙে আমও খেয়ে নেয়। পর্যটক থাকলে তারা রামলালকে দেখে খুশি হয়। অনেকে আবার হাতির ভয়ে রাতে এখানে থাকতে চান না।’

    এলাকার অনেকেই আম, কাজুর উপরে নির্ভর করে সংসার চালান। আমবাগানের মালিক শ্যামসুন্দর মাহাতো বলেন, ‘আম, কাঁঠাল ও কাজু পাকার সময়ে রামলাল এই এলাকা ছাড়ে না। নিজের ইচ্ছেমতো ফল খায় এবং গাছ ভেঙে দেয়। বড় বড় গাছ থেকে আম পাড়ার জন্য আমগাছের মধ্যে দাঁত ঢুকিয়ে সারা শরীরের ভর দিয়ে গাছ নাড়িয়ে আম পাড়ে। রামলালকে দেখে আরও তিনটি হাতি বাগান তছনছ করে চলেছে। বন দপ্তরকে জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি।’

    বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা বলেন, ‘আমরা একবার রামলালকে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলাম। তখন এলাকার লোকজনই বাধা দিয়েছিলেন। দেখি, এবার বন দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে কিছু একটা করতে হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)