ব্যারাকপুরেও এসেছিলেন পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ধৃত ব্লগার-ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রা। ভারত-পাক চরম সংঘাত, পহেলগাম হামলার অনেক আগেই কলকাতা ও পার্শ্বস্থ এলাকার তথ্য ও ছবি তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি বলে তথ্য এসেছে প্রকাশ্যে।
জানা গিয়েছে, কয়েক মাস আগেই ব্যারাকপুরেও ঘুরে গিয়েছে জ্যোতি মালহোত্রা। গ্রেপ্তারির পর তার ব্লগে চোখ পড়তেই চক্ষু চড়কগাছ সকলের। তবে কি ব্যারাকপুরের সেনা ছাউনির রেইকি করতে এসেছিল জ্যোতি? প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
ওই মহিলা ব্লগারের রেকর্ড করা তথ্যের তালিকায় দেশের নানা রাজ্যের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেরও তথ্য রয়েছে বলেও জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। তার চ্যানেলের সম্পূর্ণটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে খবর। তবে এখনও পর্যন্ত বাংলা নিয়ে কোনও আশঙ্কার তথ্য গোয়েন্দাদের নজরে আসেনি বলে জানা গিয়েছে।
ট্রাভেল ব্লগিংয়ের আড়ালে ভারতের সেনা-সহ নিরাপত্তা সংক্রান্ত নানা বিষয় পাকিস্তানের গুপ্তচরদের কাছে তুলে ধরার অভিযোগ উঠেছে জ্যোতির বিরুদ্ধে। পাক চরবৃত্তির অভিযোগে ধৃত জ্যোতি মালহোত্রার ব্লগে জ্বলজ্বল করছে বাংলার একাধিক বিখ্যাত জায়গার ভিডিয়োও। সেই সমস্ত ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে শুরু করে, সেনা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা বলে পরিচিত ব্যারাকপুরও। সেখানকার বিখ্যাত দাদা-বৌদির বিরিয়ানি খেতে খেতে ব্লগ বানিয়েছিল ধৃত তরুণী। তবে তারপর, সেখান থেকে বেরিয়ে ব্যারাকপুরের অন্যান্য কোনও জায়গায় গিয়ে ভিডিয়ো রেকর্ড করেছিল কিনা তা নিয়ে পরিষ্কার কোনও তথ্য মেলেনি।
তবে বিষয়টি নিয়ে জানাজানি হতেই কিছুটা হলেও আতঙ্কিত ব্যারাকপুরের দাদা বৌদির বিরিয়ানির কর্ণধার সঞ্জীব সাহা। তিনি জানান, সারাদিনই নানা প্রান্ত থেকে বহু ইউটিউবার আসেন দোকানে। তবে এই মহিলা কবে এসেছেন সে বিষয়ে জানা নেই। দোকানেরই একজন কর্মীর মুখ থেকে সেই খবর প্রথম শোনেন তিনি। ইতিমধ্যেই দোকানের নিরাপত্তা বাড়াতে সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি সকলকেই সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন দাদা-বৌদি বিরিয়ানির কর্ণধার।
তবে শুধু কি বিরিয়ানির দোকান! নাকি ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থাকা সেনাদের গতিবিধির তথ্যও সংগ্রহ করেছেন কী না ওই মহিলা ব্লগার তা নিয়েও চিন্তিত সঞ্জীববাবু। তবে এখন থেকে বিদেশি যে কোনও ইউটিউবার, ব্লগারদের দোকানে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করবেন বলেও জানিয়ে দেন ব্যারাকপুর দাদা-বৌদির বিরিয়ানির দোকানের মালিক ।
সব ছেড়ে হঠাৎ ব্যারাকপুরে কেন? সেই বিষয়টিও সন্দেহের বাইরে রাখতে চাইছেন না গোয়েন্দারা। তাঁর ইউটিউব চ্যানেল ফলো করলে দেখা যাচ্ছে ১১ মাস আগে কলকাতা এসেছিলেন জ্যোতি মালহোত্রা। তবে ব্যারাকপুরের দাদা-বৌদির দোকানের কর্ণধার বলছেন, চলতি বছরের শুরু অথবা গত বছরের শেষের দিকে তাঁর দোকানে এসেছিলেন এই তরুণী ইউটিউবার।
ব্যারাকপুরের পাশাপাশি ইউটিউবারের ব্লগে কলকাতার বিভিন্ন লোকেশনের ছবি, নেতাজি সুভাষচন্দ্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শিয়ালদহ স্টেশন, হাওড়া স্টেশন, হাওড়া ব্রিজ, কলকাতা মেট্রো, দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশনের মতো জায়গার ছবি রয়েছে। কলকাতায় জ্যোতির তোলা ভিডিয়োতে তার সঙ্গে আরও এক ব্যক্তির নামও উঠে এসেছে। এখন দেশের আর বাকি তথ্যের পাশাপাশি এ রাজ্যের আরও কী কী তথ্য পাকিস্তানে পাচার করেছেন ওই মহিলা ব্লগার তা নিশ্চিত হতেই তদন্ত চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা।
অন্যদিকে, দাদা বৌদির বিরিয়ানির দোকান এলাকায় লোকেদের ভিড় থাকে, তবে তা তেমন গুরুত্বপূর্ণ স্থান নয় বলেই মনে করছেন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারের ডিসি নর্থ গণেশ বিশ্বাস। তবে ব্যারাকপুরের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানেই সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে বলেও জানিয়ে দেন প্রশাসনের এই উচ্চপদস্থ আধিকারিক।
তথ্য সহায়তা: সৌমেন রায়চৌধুরী