• শরীরের ভিতরে বাড়ছে আরও একটা প্রাণ, তবু অধিকার বুঝে নিতে প্রখর রোদে পথে মণিকা
    এই সময় | ২০ মে ২০২৫
  • বেলা তখন প্রায় ১২টা। তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই। সূর্যের তাপে শরীর পুড়ছে শিক্ষিকার। ভিতরে যে তিলে তিলে বাড়ছে, তারও কষ্ট হচ্ছে খুব। অগস্টেই পৃথিবীর আলো দেখবে সে। কিন্তু মায়ের দু’ চোখে যে এখন অন্ধকার। চাকরি হারানোর পর জীবন ঘিরেছে অনিশ্চয়তার কালো। তাই অন্তঃসত্ত্বা মণিকা পাত্র সোমবার পথে নেমেছেন তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে। মেদিনীপুরের ডেবরার এই স্কুল শিক্ষিকার একটাই দাবি, যোগ্য-অযোগ্যদের আলাদা করুক রাজ্য। আদালতে তালিকা জমা দিক এসএসসি, সম্মানে চাকরি ফিরে পান যোগ্যরা।

    সোমবার সকাল ১১টা থেকে মেদিনীপুর-খড়্গপুরের সংযোগস্থলে চৌরঙ্গিতে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছিলেন জেলার শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা। তাঁদের দাবি, নতুন পরীক্ষা নয়, যোগ্যদের চাকরি সুনিশ্চিত করা, সকলের ওএমআর প্রকাশ করা। একই সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদও করেন তাঁরা। এ দিন সেই প্রতিবাদেরই মুখ হয়ে উঠেছিলেন ডেবরা ব্লকের রাধামোহনপুর গার্লস হাইস্কুলের পদার্থবিদ্যা বিষয়ের শিক্ষিকা মণিকা পাত্র।

    মণিকা বলেন, ‘কষ্ট তো হচ্ছেই। কিন্তু চাকরিটা তো ফেরত পেতে হবে। তাই ছুটে চলে এলাম।’ এর পরই স্লোগান তোলেন, ‘২৩ লক্ষ ওএমআর প্রকাশ করতে হবে, করতে হবে। যোগ্যদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে, দিতে হবে।’

    মণিকা জানান, আগামী অগস্টে তাঁর ডেলিভারির ডেট। এই অবস্থায় মেদিনীপুর থেকে কলকাতায় বিকাশ ভবনের সামনে চলা শিক্ষকদের আন্দোলনে বা অবস্থান মঞ্চে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে সহকর্মীদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রেখে চলেছেন।

    গোয়ালতোড়ের বাসিন্দা মণিকা জানান, গত ১৫ মে সন্ধ্যায় বিকাশ ভবনের সামনে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ দেখে শিউরে উঠেছিলেন। তাই সোমবার সকালে যখন শুনলেন, বাড়ির কাছেই খড়্গপুরের চৌরঙ্গিতে আন্দোলনে নামছেন সহকর্মীরা, নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননি।

    এ দিন মণিকার সঙ্গে আসেন তাঁর স্বামী প্রদীপ পাত্রও। কোলে ছিল মেয়ে। প্রদীপ জানান, একই এলাকায় বাড়ি তাঁদের। একই সঙ্গে পড়াশোনা করে বড় হয়েছেন। ছোট থেকেই মণিকা মেধাবী, লড়াকু। মাধ্যমিক থেকে বিএড সবেতেই ফার্স্ট ক্লাস। স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষাতেও একবারেই পাশ করেন। প্রদীপের কথায়, ‘যোগ্য হয়েও হকের চাকরি হারাতে হলে, কেমন লাগে বলুন?’

    মণিকা বিশ্বাস করেন, স্কুল সার্ভিস কমিশন ২৩ লক্ষ ওএমআর প্রকাশ করলেই তো মিটে যায়। তাঁর কথায়, ‘এত শারীরিক, মানসিক চাপ নিয়ে পরীক্ষা দেওয়া কি আর সম্ভব বলুন তো? তা ছাড়া আমার প্রসবের দিন ধার্য হয়েছে অগস্ট মাসে। পড়াশোনা করা বা পরীক্ষা দেওয়া কোনওটাই সম্ভব নয়। আমরা তো যোগ্যতার সমস্ত প্রমাণ দিয়েই এই চাকরি পেয়েছি। আমাদের যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সমস্ত তথ্য সুপ্রিম কোর্টের সামনে পেশ করলেই রিভিউ পিটিশনে আমরা জয়ী হব।’

  • Link to this news (এই সময়)