স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের একাধিক পণ্য আমদানি বন্ধ, ক্ষতির মুখে পড়ে আলোচনা চায় ইউনূস সরকার
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২০ মে ২০২৫
কেন্দ্রের মোদী সরকার স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতের একাধিক পণ্য আমদানি বন্ধ করতেই বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ। এই নির্দেশের ফলে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ-এর (জিটিআরআই) পরিসংখ্যান বলছে, ভারতীয় মুদ্রায় এই সমস্ত পণ্যের বার্ষিক আমদানির মোট মূল্য সাড়ে ছ’হাজার কোটি টাকার বেশি। সেজন্য সমস্যার সমাধানে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চায় ইউনূস সরকার। এব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সেদেশের বর্তমান সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। রবিবার তিনি বলেন, “ভারতের পদক্ষেপের বিষয়ে আমরা এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানি না। বিষয়টি জানার পর আমরা পদক্ষেপ করতে পারব। যদি কোনও সমস্যা দেখা দেয়, তবে দু’পক্ষ আলোচনা করব এবং তা মেটানোর চেষ্টা করব।”
প্রসঙ্গত শনিবার ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রক এব্যাপারে একটি বিবৃতি জারি করেছে। কেন্দ্রের সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রেডিমেড পোশাক কোনও স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে ঢুকবে না। কেবল জলপথে মুম্বই ও কলকাতা বন্দর দিয়ে ভারতে ঢুকতে পারবে এইসব পণ্য। এছাড়া সেই নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা বা মিজ়োরামের কোনও স্থলবন্দর দিয়েও ফল, ফলের স্বাদযুক্ত কার্বনেটেড পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার (কেক, চিপ্স বা স্ন্যাক্স), তুলো, সুতো, প্লাস্টিকের পণ্য ও কাঠের আসবাবপত্র ভারতে ঢুকতে পারবে না। এমনকি এইসব পণ্য পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ি দিয়েও ঢুকতে দেওয়া হবে না।
অবশ্য স্থলপথে মাছ, এলপিজি, ভোজ্যতেল, চুনোপাথরের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করেনি ভারত সরকার। এছাড়া যে সব পণ্য ভারতের মাধ্যমে নেপাল বা ভুটানে বাংলাদেশের যায়, তার ক্ষেত্রেও কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করছে না দিল্লি। কার্যত ভারত সরকারের এই নির্দেশিকার ফলে এখন থেকে পোশাক, তেল, ফল বা সুতো এ দেশে রপ্তানি করতে হলে বাংলাদেশের একমাত্র ভরসা জলপথ। কিন্তু এভাবে বাণিজ্য পরিষেবার ফলে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। কারণ রপ্তানির পরিমাণ কমতে বাধ্য।
উল্লেখ্য, গণবিক্ষোভের মুখে পড়ে গত ২০২৪ সালের ৫ অগস্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ভারতে চলে আসেন মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা। হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই দেশ চালাচ্ছে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এরফলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে প্রায় একবছর ধরে। অভিযোগ, ইউনূসের আমলে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার বেড়ে গিয়েছে বাংলাদেশে। এ নিয়ে ভারত সরকার একাধিক বার উদ্বেগও প্রকাশ করেছে। কিছু দিন আগে ইউনূস চিন সফরে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি সম্পর্কে তিনি বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন বলে অভিযোগ। চিনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধিও নয়াদিল্লির নজর এড়ায়নি। এর মাঝেই সম্প্রতি ভারত থেকে স্থলপথে সুতো আমদানি বন্ধ করে দেয় ঢাকা। তার পরেই ভারতের এই সিদ্ধান্ত।