ব্যবসায়ীদের থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়! ‘বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়’, একাধিক পুরসভাকে ‘ধমক’ মমতার
প্রতিদিন | ২০ মে ২০২৫
অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: সরকারকে না জানিয়েই ট্রেড লাইসেন্স ফি বৃদ্ধি! কোথাও আবার মিউটেশনের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ। সোমবার উত্তরবঙ্গে শিল্প সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাছে পেয়ে সেই সমস্ত অভিযোগ উগরে দিল শিল্পমহল। অভাব-অভিযোগ শুনে স্থানীয় নেতৃত্বকে সতর্ক করে মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তা, এসব চলবে না। পুলিশকেও সতর্ক করেছেন নিচুতলার কর্মীদের টাকা তোলা নিয়ে।
এদিন শিলিগুড়িতে ছিল ‘নর্থবেঙ্গল বিজনেস মিট-২০২৫।’ সেখানে কোচবিহার ব্যবসায়ী সমিতির তরফে সুরজকুমার ঘোষ অভিযোগ করেন, গত তিন বছরে এই জেলার ট্রেড লাইসেন্স ফি উত্তরে অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসঙ্গে মিউটেশন ফি এবং কনজারভেনশন ফি বৃদ্ধি নিয়েও অভিযোগ করেন। সেই কথা শোনামাত্রই ‘অ্যাকশন’ নেন মমতা। জানান, এই ফি যে বেড়েছে তা তিনি জানেনই না। মুখ্যসচিবকে বিষয়টি দেখে নিতে বলেন। মমতার কথায়, “কেন এটা হচ্ছে? আমি তো ফি বাড়াই-ই না। আমাদের ওখানে জলের উপরও ট্যাক্স বাড়াতে দিই না। এটা তো হওয়া উচিত না।” মুখ্যসচিবকে বিষয়টা দেখতে বলে ফাইল চেয়ে পাঠাতে নির্দেশ দেন।
শুধু কোচবিহার নয়, অন্যায্য ফি নিয়ে অভিযোগ ওঠে আসে ডালখোলার ব্যবসায়ীদের তরফেও। অভিযোগ, অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্সের পরও পুরসভার তরফে ডেভেলপমেন্ট ফি চাওয়া হয়। শোনমাত্রাই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এটা হবে না, সবাইকে বলে দাও। ওদের নেওয়ার অধিকার নেই। মুখ্যসচিব বিষয়টি দেখে নেবে।” তারপরই মমতার সংযোজন, “সব জায়গায় লোকালরা একটু বেশি পাওয়ারফুল হয় না।” একথায় বসার পরই হাততালিতে ফেটে পড়ে অডিটোরিয়াম। তিনি আরও বলেন, “ওরা সব বড় বড়। একটা কথা আছে না, বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়। আর বললাম না। ওরা নিজেদের টাকা ইনকামের জন্য এসব করে। কিন্তু আমরা এটা সাপোর্ট করি না। মুখ্যসচিবকে বলে দেব গাইডলাইন দিয়ে দিতে।”
সতর্ক করেন নিচুতলার পুলিশ কর্মীদের টাকা তোলার বিষয় নিয়েও। উত্তর দিনাজপুরের এক ব্যবসায়ী শংকর কুন্ডু অভিযোগ করেছিলেন, “রাস্তায় শিল্পপতিদের গাড়ি যখন যায়, টোল ট্যাক্স, জিএসটি, পুলিশ ইত্যাদির হয়রানিতে কস্টিং বেড়ে যায়। এটা গোটা দেশজুড়ে। এটা আমাদের চরম কষ্টকর একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। গাড়ি ভাড়াও বেড়ে গিয়েছে।” তাঁর কথা শেষ হওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “টোল ট্যাক্স, জিএসটি, পুরোটাই কেন্দ্রীয় সরকারের। এখন তো একটাই ট্যাক্স। আগে রাজ্য নিত। রাজ্যের হলে আমি এখনই বলে দিতাম আমি নেব না। তবে আমরা একটা অনুরোধ করে দেখতে পারি।” পরে সংযোজন, “তবে পুলিশ যাতে কোনও ট্যাক্স না নেয়, সেটা দেখার দায়িত্ব পুলিশের।”
তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসার পর থেকেই রাজ্যের শিল্প বিনিয়োগ আনতে সবরকম পদক্ষেপ করেছেন মমতা। বাংলার শিল্পবান্ধব পরিবেশকে আৎও উন্নত করতে সমস্তরকম প্রতিবন্ধকতা মুছে ফেলছেন। এদিন মমতার বার্তা থেকে আরও একবার মুখ্যমন্ত্রীর সেই শিল্পবান্ধব ভাবমূর্তিটা স্পষ্ট হয়ে গেল।