সংবাদদাতা, রামপুরহাট: রামপুরহাটের পাথর শিল্পাঞ্চলে ব্যবসায়ীকে খুন করতে বড় ছক কষা হয়েছিল। একাধিকজনকে বিভিন্ন কাজের জন্য আলাদা আলাদা বরাত দেওয়া হয়েছিল। খুনে সর্বমোট খরচ দেড় লক্ষ টাকা। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডের শার্প শ্যুটার সহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। তাদের জেরা করে জানা গিয়েছে, এই খুনের জন্য শার্প শ্যুটার নিয়েছিল ৩০ হাজার টাকা। উদ্ধার হয়েছে খুনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও বাইক। পুলিস জানিয়েছে, এই খুনে আরও চার-পাঁচজন ষড়যন্ত্রকারী রয়েছে। বর্তমানে তারা এলাকা ছাড়া। তাদের খোঁজ চলছে।
গত ২৭ এপ্রিল ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া রামপুরহাটের পাথর শিল্পাঞ্চল নিরিষা গ্রামের চায়ের দোকানের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা ভর্তি ব্যাগ ছিনিয়ে ঝাড়খণ্ডের দিকে চম্পট দেয় সশ্রস্ত্র দুষ্কৃতীরা। গুলিতে মৃত্যু হয় সুদীপ বাস্কি নামে বছর আঠাশের এক ব্যবসায়ীর। তাঁর বাড়ি রামপুরহাটের সুলঙ্গা গ্রামে। পুলিস তদন্তে নেমে জানতে পারে, ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে খুন নয়, এর পিছনে অন্য কারণ রয়েছে। মৃতের পরিবারের তরফেও জানানো হয়, গ্রামেরই কয়েকজন সুদীপকে মারার হুমকি দিত। সেইমতো পুলিস ঘটনার তিনদিন পর সুলঙ্গা গ্রামের অলড্রেন বাস্কি, রাজেন টুডু, অক্ষয় মির্ধা ও অমিত টুডুকে গ্রেপ্তার করে। তাদের জেরা করে পুলিস জানতে পারে ঝাড়খণ্ডের শার্প শ্যুটার সনাতন মারিয়া ওরফে বাঘীকে সুপারি কিলার হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। সেই মতো গত ৪ মে রাতে ঝাড়খণ্ডের মহেশপুর থানার ডুমুরঘাঁটি গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে বাঘীকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। তাকে জেরা করে পুলিস জানতে পারে, সুদীপকে গুলি করে খুন করার জন্য মাত্র ৩০ হাজারে ডিল হয়েছিল। তবে তাকে নিয়ে আসা ও পৌঁছে দেওয়া, চেনানো সবই দায়িত্ব ছিল ষড়যন্ত্রকারীদের।
গত ৬ মে পুলিস ঝাড়খণ্ড সীমানার গোপন ডেরা থেকে রাজু মির্ধা নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করে। তার বাড়ি ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়া থানার আস্তাকাঁদর গ্রামে। সে মৃত সুদীপের ডাম্পারের খালাসি ছিল। মাত্র দশ হাজার টাকার বিনিময়ে সে সুদীপকে চিনিয়ে দিয়েছিল। ধৃতরা সকলেই এখন পুলিস হেফাজতে। পুলিসের দাবি, সনাতনকে জেরা করে মহম্মদবাজার থানার ডামরা গ্রাম থেকে খুনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র, চার রাউন্ড গুলি ও বাইক উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তে পুলিস জানতে পেরেছে, সুদীপ এলাকায় দাদাগিরির পাশাপাশি তোলাবাজি করত। সেই রাশ নিজেদের হাতে নিতেই অমিত টুডু, অলড্রেন বাস্কিরা ঘটনার কয়েকদিন আগেই সুদীপকে খুনের বড়সড় ছক কষে। সেই মতো তারা আলাদা আলাদা বরাত দিতে শুরু করে। যেমন রাজুর দায়িত্ব ছিল কন্ট্রাক্ট কিলারকে সুদীপকে চিনিয়ে দেওয়ার। তেমনি কারও বরাত ছিল, সুদীপ কোথায় কখন থাকে সেই খবর দেওয়ার। কন্ট্রাক্ট কিলারকে বাইকে করে নিয়ে রেইকি ও ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে নিয়ে আসার দায়িত্বে অন্য কেউ ছিল। এভাবেই ঘুঁটি সাজিয়ে পৃথক পৃথক বরাত দিয়ে খুন করা হয় ওই ব্যবসায়ীকে। তবে শুধু বাইকে করে নয়, টোটোয় চেপেও ওইদিন দুষ্কৃতীরা এসেছিল। সেই টোটো ও বাকি ষড়যন্ত্রকারীদের ধরতে ঝাড়খণ্ড পুলিসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে রামপুরহাট থানার পুলিস। এদিকে খুনের ঘটনার পর প্রায় ২২ দিন কেটে গেলেও এখনও আতঙ্ক