চাপেই কি নতি স্বীকার? অবশেষে বাজেট বাতিলের সিদ্ধান্ত পুরসভার
বর্তমান | ২০ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি কৃষ্ণনগর: চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত নতিস্বীকার করে নিল পুরসভা? নতুন অর্থবছরের কৃষ্ণনগর পুরসভার বাজেট বাতিল করার পর সেই প্রশ্নই উঠছে। সেইসঙ্গে নতুন করে বাজেট তৈরির জন্য সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে ডিরেক্টর অব লোকাল বডিজ বা ডিএলবি’র কাছে। বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সেই পুরোনো বাজেটে কিছু সংশোধনীর প্রয়োজন রয়েছে বলেই জানানো হয়েছে চিঠিতে। সম্প্রতি, এই বাজেট ‘অবৈধভাবে’ পাশ করানোর অভিযোগ তুলেছিলেন কৃষ্ণনগর পুরসভার চেয়ারপার্সনের বিরোধী গোষ্ঠীর কাউন্সিলাররা। তার পর পিছু হটে যাওয়ায় কার্যত সেই অভিযোগকেই পুরসভা মান্যতা দিল বলেই অনেকেই মনে করছেন। স্বভাবতই চেয়ারপার্সন-বিরোধী কাউন্সিলাররা বিষয়টিকে নিজেদের ‘জয়’ হিসেবেই দেখছেন। যদিও পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, কাউন্সিলারদের বিদ্রোহের কারণে তৈরি হওয়া অচলাবস্থা কাটাতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, টানা তিন মাস ধরে পুরসভার অচলাবস্থা কাটার আশা দেখা গিয়েছে বলে মনে করেছেন শহরবাসী।
কৃষ্ণনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন রীতা দাস বলেন, সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। আগের বাজেটে কিছু পুরো প্রতিনিধি সংশোধনের দাবি করেছিলেন। সেই নিয়ে বেশ কিছু সময় ধরে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল। আমাকেও অফিসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। পুরো প্রতিনিধিদের দাবিকে মান্যতা দিয়েই আগের বাজেট বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে বাজেটে তৈরি করা হবে। চেয়ারপার্সন-বিরোধী কাউন্সিলার মিলন ঘোষ বলেন, আমাদের দাবিকে মান্যতা দিয়ে অবৈধভাবে পাশ করানো বাজেট বাতিল করেছেন। আমাদের নৈতিক জয় হয়েছে। চেয়ারপার্সন-বিরোধী কাউন্সিলার অসিত সাহা বলেন, আমরা আমাদের ধর্না কর্মসূচি তুলে নিয়েছি। পরবর্তীতে পুরসভা বাজেট সংক্রান্ত অধিবেশন নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেই দিকেই আমরা তাকিয়ে রয়েছি। সোমবার কৃষ্ণনগর পুরসভার তরফে ডিএলবি’কে চিঠি করা হয়। তাতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক বাজেট গ্রহণের সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন করা হয়। পাশাপাশি চিঠিতে বলা হয়, ‘কিছু কাউন্সিলার অনুরোধ জানিয়েছেন, পুরসভার কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য বার্ষিক বাজেটে কিছু প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন রয়েছে।’ গত মার্চ মাসের ৭ তারিখ কৃষ্ণনগর পুরসভায় বাজেট অধিবেশন হয়। সেখানে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট পুরো বোর্ডের কাছে পেশ করা হয়। ঘটনাচক্রে, ওইদিন কিছু কাউন্সিলার বোর্ড মিটিং চলাকালীন ‘অস্বাভাবিক’ আচরণ করে বলে অভিযোগ। মিটিং শেষ হওয়ার আগেই চেয়ারপার্সনকে অসুস্থ অবস্থায় বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। তারপর থেকে পুনরায় বোর্ড মিটিং করার জন্য একাধিক তারিখ দেওয়া হয়েছিল পুর কর্তৃপক্ষের তরফে। কিন্তু প্রতিবারই শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করা হয়। এরইমধ্যে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বাজেট পাশ করিয়ে ডিএলবি›তে পুর কর্তৃপক্ষ পাঠিয়ে দিয়েছিল বলে অভিযোগ তোলেন চেয়ারপার্সন-বিরোধী দলীয় কাউন্সিলাররা। তারপর থেকেই কাউন্সিলারা পুরসভার সামনে একাধিকবার বিক্ষোভ, প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। তাঁদের দাবি ছিল, ৭ মার্চ তারিখে বাজেট অধিবেশনের আসল রেজল্যুশন কপি যেন তাঁদের দেওয়া হয়। মে’মাসের শুরু থেকেই চেয়ারপার্সনকে তাঁর ঘরে ঢুকতে দিচ্ছিলেন না কাউন্সিলাররা। পুরসভার অন্দরে এই টালমাটাল পরিস্থিতির কারণে শহরবাসীর পরিষেবা কার্যত শিকেয় ওঠে। বাইরে চেয়ার টেবিল পেতে পরিষেবা দিতে দেখা গিয়েছে চেয়ারপার্সনকে।