প্রয়োজনে পাওয়া যায় না বিধায়ককে, হিরণের উপর ক্ষুব্ধ খড়্গপুরের মানুষ
বর্তমান | ২০ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, খড়গপুর: ঢালাও প্রতিশ্রুতি। মানুষের পাশে থাকার বার্তা। বাদ যায়নি কিছুই। কিন্তু চার বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও তিনি কথা রাখেননি। ইদানিং ভোটার কার্ড, পাসপোর্টের প্রসঙ্গ তুলে ভূমিপুত্র সাজার চেষ্টা করলেও, খড়গপুর শহরবাসী বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে ‘ডুমুরের ফুল’ বলেই ডাকেন। বিধায়ককে পাশে না পেয়ে ক্ষুব্ধ রেল শহরের মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, হিরণ বিধায়কের পাশাপাশি ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলারও। তাঁর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। কিন্তু সেই সমস্যা সমাধানে হিরণকে পাশে পায়নি সাধারণ মানুষ। বিধায়কের এই ব্যবহারে ক্ষুব্ধ জেলা বিজেপির নেতাকর্মীদের একাংশ। কারণ, এতে বিজেপির ভাবমূর্তি তলানিতে নেমে এসেছে। শহরের এক বাসিন্দার কথায়, বিধায়ক বেশিভাগ সময়ে জেলার বাইরেই থাকেন। কেউ কোনও সমস্যায় পড়লে তাঁর নম্বরে ফোন করা ছাড়া উপায় নেই। মাঝে মধ্যে এলে শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েই ফিরে যান।রবিবার খড়গপুর শহরের নিজের ওয়ার্ডে ঝটিকা সফরে মানুষের সমস্যার সমাধান করতে এসেছিলেন হিরণ। সেই সময়ে তিনি বলেন, আমরা যাঁরা রাজনৈতিক প্রতিনিধি, তাঁদের মানুষ ভোট দিয়ে জেতায়। আমি খড়গপুরে চার বছর ধরে পড়ে রয়েছি। খড়গপুরেই থাকি। আমার পাসপোর্ট খড়গপুরের, ভোটার কার্ডটাও এই এলাকার। প্রাক্তন ও বর্তমান সাংসদ দুজনের কেউই এখনকার ভোটার নন। মেদিনীপুরের পাসপোর্ট নেই। এখানে যিনি আগে বিধায়ক ছিলেন, তিনি রেলের বাংলোতে থাকতেন। কিন্তু, আমি নিজের পয়সা খরচ করে থাকি।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সাল থেকেই রেল শহরে বিজেপির উত্থান শুরু। যার কান্ডারি ছিলেন প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষ। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটেও বাজিমাত করে গেরুয়া শিবির। সাংসদ হন দিলীপবাবু। সেই সময় বহু নেতা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। এরপর ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে খড়গপুর আসনে বিজেপির তরফে প্রার্থী করা হয় অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে। হিরণ প্রার্থী হওয়ার পরেই প্রতিশ্রুতির ঝুলি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন। সারা রাজ্যে তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও রেল শহরের মানুষ হিরণকেই বিধায়ক হিসেবে বেছে নেন। সেই ভুলের খেসারত রেল শহরের বাসিন্দাদের আজও দিতে হচ্ছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
রেল শহরের এক বাসিন্দা বলেন, বিধায়ক তথা কাউন্সিলারের থেকে কোনও সার্টিফিকেট পেতে কাল ঘাম ছুটে যায়। হিরণ ঘনিষ্ঠ নেতাদের হাতেই সবকিছু। রেল শহরে এলে গুটি কয়েক মানুষের সঙ্গে কথা বলেই বিধায়ক ফিরে যান। এসি ঘরে থেকে মানুষের সমস্যা বোঝা খুবই কঠিন।এনিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না তৃণমূলও। জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি জহরলাল পাল বলেন, মানুষ ভুল বুঝতে পারছেন। বিধায়ককে খুঁজে পেলে তো মানুষ সমস্যার কথা জানাবেন। এলাকায় জলের, রাস্তার সমস্যা রয়েছে। কিন্তু বিধায়ক কোনও সমস্যার সমাধান করছেন না। মানুষ সব বুঝতে পারছেন। যোগ্য জবাব পাবে। মেদিনীপুর শহরে বাসিন্দা তন্ময় দাস বলেন, বিধায়ককে একদমই পান না সাধারণ মানুষ। বিধায়ক এলেও জলের সমস্যার সমাধান নিয়ে কিছুই বললেন না। উনি হয়তো শুধু প্রতিশ্রুতি দিতেই এসেছিলেন।