নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মাউন্ট এভারেস্ট (৮৮৪৮.৬৬ মিটার) জয় করলেন কলকাতার পুলিস কমিশনার মনোজ ভার্মার দেহরক্ষী হিসেবে নিযুক্ত লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ তিনি বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আরোহণ করেন। তাঁর সঙ্গেই সর্বোচ্চ শিখরে পা রেখেছেন তেনজিং শেরপা। লক্ষ্মীকান্তের এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত কলকাতা পুলিস। সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি পোস্ট করে শুভেচ্ছা জানিয়েছে তারা। রাজ্য সশস্ত্র পুলিসের তৃতীয় ব্যাটালিয়নের এই কনস্টেবল এভারেস্ট জয়ের জন্য এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে রওনা হয়েছিলেন। তখন তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন সিপি মনোজ কুমার ভার্মা।
পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের মাথুরি গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মীকান্তবাবু। ২০১২ সালে তিনি পুলিসে চাকরি পান। ভূগোলে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হওয়ার পাশাপাশি হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন থেকে পর্বতারোহণের বেসিক এবং অ্যাডভান্সড কোর্স করেন। সার্চ এবং রেসকিউ অপারেশনের প্রশিক্ষণও নিয়েছেন তিনি। তমলুকে তাঁর পরিবারের সদস্যরা এদিন সকালে খুশির খবরটি পান কলকাতা পুলিসের ফোন থেকে। তাঁর বাবা বনমালীচরণ মণ্ডল বলেন, ‘আমরা খুবই খুশি। শুধু একটাই প্রার্থনা, ভালোয় ভালোয় এবার নেমে আসুক ও।’ এভারেস্ট অভিযানের চলতি মরশুমে নদীয়ার এক শিক্ষক শৃঙ্গ জয়ের পর নেমে আসার পথে প্রাণ হারান। এই খবরে তাঁদের চিন্তা কিছুটা হলেও বেড়েছে বলে জানালেন বনমালীবাবু। এদিনই তমলুকের পদস্থ পুলিসকর্তারা ফুল-মিষ্টি আর শুভেচ্ছা নিয়ে হাজির হন তাঁর বাড়িতে। কর্মচঞ্চল ও ডাকাবুকো চরিত্রের জন্য লক্ষ্মীকান্তবাবু আইপিএস মহলে এবং সহকর্মীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় বলেই জানা গিয়েছে।
২০১৩ সালে কলকাতা পুলিসের তৎকালীন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার উজ্জ্বল রায় এভারেস্ট জয় করেন। তিনি এদিন বলেন, ‘খুশির খবরটা সকালেই পেয়েছি। প্রস্তুতির সময় থেকেই ওঁর সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল। আমার অভিজ্ঞতা ওঁর সঙ্গে শেয়ার করেছিলাম। আমি নিশ্চিত ছিলাম যে আবহাওয়া অনুকূল থাকলে লক্ষ্মীকান্ত ঠিকই শৃঙ্গ জয় করে ফিরবে।’ তাঁকে সহায়তার জন্য প্রথমদিন থেকে কাঠমাণ্ডুতে আছেন কলকাতা পুলিসের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অলক সান্যাল এবং ইনসপেক্টর অমিত মাইতি। সোমবার সন্ধ্যায় ফোনে অলকবাবু বলেন, ‘লক্ষ্মীকান্ত এদিনই ক্যাম্প-৪ পর্যন্ত নেমে এসেছেন। আবহাওয়া ঠিক থাকলে মঙ্গলবার সকালে তাঁরা বেস ক্যাম্পে নেমে আসার জন্য যাত্রা শুরু করবেন।’
সব মিলিয়ে তাঁর এই সাফল্যে পুলিস মহলে তৈরি হয়েছে খুশির বাতাবরণ। এভারেস্ট জয়ের স্বপ্নপূরণের পাশাপাশি লক্ষ্মীকান্ত এক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষীও হতে পেরেছেন। কারণ, এদিন একই সময়ে এভারেস্ট জয় করে পর্বতারোহণের ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন ভারতের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী অভিযাত্রী ছোংজিন আঙমো। তাঁর সঙ্গে এভারেস্টে আরোহণ করেছেন ডান্ডু শেরপা এবং ওম বাহাদুর গুরুং। একই সময়ে এভারেস্ট জয় করেছেন সিআইএসএফের মহিলা জওয়ান গীতা সামোটা। তাঁর সঙ্গে সাহায্যকারী হিসেবে ছিলেন লাকপা শেরপা। ফাইল চিত্র