• আন্দোলনেরও লক্ষ্মণরেখা থাকা উচিত, বার্তা মমতার, চাকরিহারাদের অবস্থান নিয়ে হাইকোর্টে মামলা
    বর্তমান | ২০ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘আমি আন্দোলনের বিপক্ষে নই। কিন্তু আন্দোলন করার একটা লক্ষ্মণরেখা আছে। আমার অধিকার নেই কাউকে বাধা দেওয়ার। আবার অন্যের অধিকার নেই আমাকে বাধা দেওয়ার।’ সোমবার উত্তরবঙ্গে রওনা দেওয়ার আগে চাকরিহারা শিক্ষকদের আন্দোলন সম্পর্কে নিজের মনোভাব বুঝিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিকাশ ভবন সংলগ্ন এলাকায় রাস্তা বন্ধ এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। উচ্চ আদালত সেটি গ্রহণ করেছে। আন্দোলনে পুলিসি অতিসক্রিয়তা নিয়ে পৃথক একটি মামলা দায়ের হয়েছে হাইকোর্টে। বুধবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে সেটির শুনানি হওয়ার কথা।

    বিকাশ ভবন অভিযান সম্পর্কে এতটা স্পষ্ট এবং বিস্তারিত বার্তা মুখ্যমন্ত্রী এর আগে দেননি। মমতা বলেন, ‘ওদের প্রতি আমার যথেষ্ট সহানুভূতি আছে এবং থাকবে। ওদের সঙ্গে বৈঠক করে বলেছিলাম, রিভিউ করব। আমরা রিভিউ পিটিশন করেছি। কোর্ট যদি রিভিউ পিটিশন অ্যালাও করে ভালো কথা। আমরা চাইব এবং আমাদের আইনজীবীরা চাইবেন, যাতে ওঁদের চাকরি থাকে। সেখানে কোর্ট যদি কোনও সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা মানতে সরকার বাধ্য। কিন্তু আমরা কারও বেতন বন্ধ করিনি। এমনকী, গ্রুপ সি-ডি’দেরও একটি স্কিমের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। আমার একটি বিষয় খারাপ লাগে, যাঁরা উস্কানি দিচ্ছেন, তাঁরাই কিন্তু মামলা করেছেন ওঁদের বিরুদ্ধে। চাকরি আমাদের জন্য যায়নি। দায়ী যাঁরা, তাঁরা এটা না করলেই পারতেন। যাঁরা চাকরি খেয়েছেন, সেই নাটের গুরু যদি আজকে স্বার্থরক্ষার গুরু হয়ে যান, তাতে আপত্তি আছে।’

    এরপরই আন্দালনের ধরন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা। বলেন, ‘সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করে, গেট ভেঙে দেওয়া বা জোরজবরদস্তির মাধ্যমে বলপ্রয়োগ করে আন্দোলন হতে পারে না। তাহলে আন্দোলনের সারমর্মটাই হারিয়ে যায়। যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের সম্পর্কেও আমাদের কোনও অভিযোগ নেই। কাউকে জোর করে আটকে রাখা বা রাস্তা অবরোধ করে মানুষের ক্ষতি করাটাই অভিযোগ। এতে শিক্ষকের চেয়ে বাইরের লোকই ছিল বেশি। গর্ভবতী মাকে বাড়ি যেতে দিচ্ছে না। যাঁরা অফিসের কাজ করছেন, তাঁদের ২০ ঘণ্টা আটকে রেখে দেওয়া হচ্ছে। একজন পরীক্ষার্থীকে নামতে দেওয়া হয়নি, সে বারবার বলেছে বাড়ি যাবে। ভয়ে লাফ দিয়ে পায়ে চোট পেয়েছে। এখন সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সবারই মানবিকতা থাকা দরকার।’ চাকরিহারাদের পরামর্শও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, ‘আমি বলব, আপনারা এখানে আন্দোলন না করে আইনি লড়াই করুন। আমরা পুরো সহযোগিতা করব। আমরা সাধ্যমতো করছি। আমরা তো ওদের বিপক্ষে নই। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দল যদি মনে করে জলঘোলা করবে, তাদের প্রশ্ন করব, আদালতে মামলা তো আপনারা করেছিলেন, সেটা করা কি উচিত ছিল?’

    এপ্রসঙ্গে এদিন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, ‘আমি এই আন্দোলনকে ছোট করব না। আমি চাই না, এই আন্দোলনকে রাজনীতির রঙে রাঙানো হোক। তবে আন্দোলনকারীদের কাছে একটাই অনুরোধ করব—আন্দোলন যেন হিংসাত্মক না হয়।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)