• টিটাগড়ে বন্ধ ফ্ল্যাটে বিস্ফোরণ, ধৃত তৃণমূল কাউন্সিলার
    বর্তমান | ২০ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাকপুর: সোমবার সকালে টিটাগড় থানার অদূরে চার নম্বর ওয়ার্ডের বাঁশবাগান এলাকায় একটি বহুতল আবাসনের পাঁচতলায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বিস্ফোরণের তীব্রতায় সংশ্লিষ্ট ফ্ল্যাটের ১০ ইঞ্চি গাঁথনির দেওয়াল উড়ে গিয়ে পড়ে পাশের বস্তিতে। সেখানে একাধিক ঘরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পায় ১২ বছরের হাসান রাজা নামে এক কিশোর। সকাল সাড়ে ছটা নাগাদ ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিসের অনুমান, বন্ধ ওই ফ্ল্যাটের ভিতর প্রচুর সংখ্যক বোমা মজুত করা ছিল। বিস্ফোরণ হয়েছে সেখানেই। ওই ফ্ল্যাটটি গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলার মহম্মদ রিয়াজউদ্দিন ওরফে আরমান মণ্ডলের হেফাজতে ছিল। বিস্ফোরণের ঘটনায় তাঁকে থানায় ডেকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করা হয়। পাকড়াও করা হয়েছে আরও দু’জনকে। ঘটনার জেরে শাসকদলের অন্দরে তুমুল আলোড়ন শুরু হয়েছে। ওই ফ্ল্যাটে কী ধরনের বোমা বা বিস্ফোরক মজুত করা ছিল, রাতেই তা খতিয়ে দেখেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। 

    বাঁশবাগান এলাকায় ন’কাঠা পরিমাপের একটি জমির মালিক কিরণ সাউ ২০১৬ সালে সেখানে যৌথ উদ্যোগে প্রোমোটিং করার জন্য অনিল গুপ্তা নামে এক প্রোমোটারকে দিয়েছিলেন। ৪৮ টি ফ্ল্যাট রয়েছে এই বহুতলে। ভবনে ছাদের ছাদের ঘরগুলো বেআইনিভাবে তৈরি করা হয়েছে, এমন অভিযোগও রয়েছে। কীভাবে পাঁচতলার ওই ফ্ল্যাট নিজের হেফাজতে রেখেছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলার? প্রোমোটার অনিল গুপ্তা জানিয়েছেন, ২০২২ সালে পুরসভা ভোটের আগে ওই ঘরের চাবি দেওয়া হয়েছিল আরমান মণ্ডলকে। সেই চাবি তিনি আর ফিরিয়ে দেননি। সকালে কাউন্সিলার সেই অভিযোগ অস্বীকার করলেও, দীর্ঘ-জিজ্ঞাসাবাদের পর সন্ধ্যায় তা স্বীকার করার পর গ্রেপ্তার করা হয় আরমান মণ্ডলকে। 

    বিস্ফোরণের তীব্রতায় ফ্ল্যাটের দেওয়াল যেমন উড়ে গিয়েছে, তেমনই ঘরের জানলায় লাগানো লোহার গ্রিল উড়ে গিয়ে পড়েছে সংলগ্ন বস্তির টালির ঘরগুলোতে। আবাসনের পাঁচতলা থেকে বড় বড় চাঙর খণ্ড-খণ্ড হয়ে যেভাবে টালির ঘরগুলোর উপর পড়েছে, তাতে বড়সড় বিপর্যয় হতেই পারত। যে ফ্ল্যাটে বিস্ফোরণ হয়েছে, তার পাশের ঘরে ছেলেকে নিয়ে শুয়ে ছিলেন সঙ্গীতা দেবী। তিনি বলেন, সাত সকালে এত বিকট আওয়াজ হল, ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভাবলাম গ্যাসের সিলিন্ডার ফেটেছে। পরে শুনলাম বোমা বিস্ফোরণ। একই রকম ভয়ের কথা শোনালেন জাহানারা বিবি। তিনি বলেন বাড়িটা বোধহয় ভেঙেই পড়ল। বিস্ফোরণের জলের পাইপ ফেটে গোটা বাড়িতে জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আমরা খুবই সমস্যায় পড়েছি। 

    পাশের বস্তির বাসিন্দা ঘটনায় আহত হাসান রাজার বাবা মহম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে আমার ছেলে। ট্রমাটাইজড হয়ে গিয়েছে।  স্থানীয় বিধায়ক রাজ চক্রবর্তীর কথায়, যে যা কর্ম করবে, তার ফল তাকেই ভুগতে হবে। প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিং ঘটনার এনআইএ তদন্তের দাবি জানান। তৃণমূলের জেলা সভাপতি পার্থ ভৌমিক বলেছেন, অপরাধীর সাজা হবেই। দল কোনও অপরাধীকে প্রশ্রয় দেয় না। বারাকপুরের  পুলিস কমিশনার অজয় ঠাকুর বলেছেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় যোগসূত্র থাকার কারণেই কাউন্সিলার সহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)