প্রাতঃভ্রমণে গিয়ে অপহৃত পুরুলিয়ার কয়লা ব্যবসায়ী, নেপথ্যে ব্যবসায়িক লেনদেন?
প্রতিদিন | ২০ মে ২০২৫
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: প্রাতঃভ্রমণে গিয়ে অপহৃত পুরুলিয়ার ঝালদার কয়লা ব্যবসায়ী। সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ঝালদা থেকে ব্রজপুর রাস্তায় সাধুডেরার কাছে হাঁটছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিল ওই গ্রামেরই এক বাসিন্দা। অপহরণকারীরা ওই এলাকা থেকে সঙ্গীকে লাঠিপেটা করে সরিয়ে ওই ব্যবসায়ীর মুখে গামছা বেঁধে টেনে গাড়িতে চাপিয়ে নিয়ে চলে যায় বলে অভিযোগ।
এদিন বিকেলে ব্রজপুরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী লোকেশ গরাঁই স্ত্রী ললিতা ঝালদা থানায় অপহরণের অভিযোগ করেন। অপহরণের অভিযোগের ভিত্তিতে অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে পুলিশ। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “ঝালদার অপহরণের ঘটনায় তদন্ত চলছে। বেশ কয়েকটি জায়গায় হানা দেওয়া হয়েছে পীড়িতকে উদ্ধারের জন্য। এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।”
ঘটনার পরেই ব্রজপুর রাস্তায় ওই সাধুডেরার কাছে যান ঝালদা মহকুমা পুলিশ আধিকারিক গৌরব ঘোষ ও ঝালদার আইসি পার্থসারথি ঘোষ। তাঁদের নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক দল ওই এলাকা ঘুরে দেখেন। পুলিশ বিভিন্ন খোঁজখবর করে জানতে পারেন, ওই কয়লা ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে দুষ্কৃতীরা ঝাড়খন্ডে গা ঢাকা দিয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, তাদের কাছে প্রাথমিক তথ্য এসেছে, দুষ্কৃতীরা অপহরণ করে ঝালদার অভিমুখে রওনা দিলেও গ্রামীণ রাস্তা ধরে জঙ্গলঘেরা পথ দিয়ে ঝাড়খণ্ডের দিকে চলে যায়। দিনভর ঝাড়খণ্ডের কাসমার, গোলা ও রামগড় থানার কয়েকটি এলাকায় গিয়ে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। তা খতিয়ে দেখে ওই থানাগুলির সঙ্গে কথা বলে। ব্যবসায়ীর সঙ্গে থাকা ভৃগুরাম চালক বলেন, “আমরা রোজকারের মতো একসঙ্গে খুব কাছাকাছি হাঁটছিলাম। হঠাৎই একটি কালো চার চাকার গাড়ি আমাদের সামনে এসে থামে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই জনা চারেক লোক লোকেশের মুখে গামছা বেঁধে তাকে টেনে গাড়ির দিকে নিয়ে যায় । আমি চিৎকার করতে থাকলে আমাকে লাঠিপেটা করে ফেলে দেয়। তারপর দ্রুত আমি ওখান থেকে এসে লোকেশের বাড়িতে বিষয়টি জানায়।” পুলিশ ভৃগুরামের সঙ্গেও কথা বলেছে। এদিন থানায় অভিযোগ করার পর ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী ললিতা গরাঁই সেভাবে কিছু জানাতে চাননি। তাঁর সংক্ষিপ্ত কথা, “আমার স্বামীর সঙ্গে কারও কোনও ঝামেলা ছিল বলে আমার জানা নেই। বাকি যা জানানোর সবকিছুই পুলিশকে জানিয়েছি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।”
ওই কয়লা ব্যবসায়ী লোকেশ গরাঁই-র বাড়ি ঝাড়খণ্ড সীমানা ছুঁয়ে থাকা ব্রজপুরে। দীর্ঘদিন ধরেই কয়লার ব্যবসায়ীর সঙ্গে যুক্ত তিনি। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, ব্যবসার লেনদেন সংক্রান্ত কোন ঝামেলার জেরে এই ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া অন্য কোনও বিষয় আছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ওই ব্যবসায়ীরা তিন ভাই। লোকেশ বড়। তার শ্বশুরবাড়ি ঝাড়খণ্ডের রামগড়ের মান্ডু এলাকায়। এক মেয়ে, দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর সংসার। ব্যবসায়ীর আরও দুই ভাই অন্যান্য ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এই অপহরণ কাণ্ডে স্থানীয় কোনও যোগ রয়েছে কিনা সবটাই খতিয়ে দেখছে পুলিশ।