এই সময়: প্রায় দেড়শো বছর ধরে ব্যাপারটা ‘রহস্য’ হয়েই ছিল। এত দিনে তার সমাধান খুঁজে পেলেন জ়ুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া–র (জ়েডএসআই) বিজ্ঞানীরা। ১৮৭২ সালে বিখ্যাত চেক ফসিল বিশেষজ্ঞ ফার্দিনান্দ স্তোলিচকা প্রথম খোঁজ পেয়েছিলেন মরুভূমির বাসিন্দা বিশেষ এক ধরনের টিকটিকি ‘পার্সিয়ান লং টেইলড ডেজ়ার্ট লিজ়ার্ড’–এর (মেসালিনা ওয়াটসোনানা)।
স্তোলিচকার নেশাই ছিল দুর্গম জায়গায় ঘুরে ঘুরে নতুন নতুন প্রজাতির প্রাণীর খোঁজ করা। মরুভূমির বাসিন্দা ওই টিকটিকির সন্ধান ওই ভাবেই তিনি পেয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী কালে স্তোলিচকার সংগ্রহ করা স্পেসিমেনগুলি আর কলকাতায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। লন্ডন এবং ভিয়েনাতেও ছড়িয়ে পড়েছিল সংগ্রহের অনেকটা অংশ।
ফলে, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা ঘুরে তাঁর সংগ্রহ করা নমুনাগুলির মধ্যে ঠিক কোনটি যে পার্সিয়ান লং টেইলড ডেজ়ার্ট লিজ়ার্ড — সেটা আর নিশ্চিত ভাবে বুঝে উঠতে পারছিলেন না প্রাণীবিজ্ঞানীরা।
প্রায় দেড়শো বছরের পুরোনো সেই প্রহেলিকার সমাধান মিলল এত দিনে। জ়েডএসআই–এর দুই প্রাণীবিজ্ঞানী সুমিধ রায় এবং প্রত্যুষ মহাপাত্র কলকাতায় সংস্থার সদর দপ্তরে রাখা পুরোনো রেকর্ডের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিশেষ একটি নমুনাকে পার্সিয়ান লং টেইলড ডেজ়ার্ট লিজ়ার্ডের ‘লেকটোটাইপ’ হিসেবে শনাক্ত করেছেন।
বহু পুরোনো যে ক্যাটালগ থেকে এই নমুনাটি পাওয়া গিয়েছে, সেটি জ়েডএসআই–এ ZSI-R-5050 হিসেবে চিহ্নিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘প্রাণীবিজ্ঞানের জগতে যে নমুনাকে একটি বিশেষ প্রজাতির প্রাণী চিহ্নিতকরণের জন্য ‘মডেল’ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়, সেই নমুনাটিকে ‘লেকটোটাইপ’ বলা হয়।’
সংস্থার অধিকর্তা ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায় পার্সিয়ান লং টেইলড ডেজ়ার্ট লিজ়ার্ডের এই লেকটোটাইপের খোঁজ পাওয়ার বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলেই মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘স্তোলিচকার উদ্যোগ প্রাণীবিজ্ঞানের জন্যে অমূল্য।
ভারত এবং ভারতের কাছাকাছি এলাকায় ঘুরে তিনি যা নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন, সেই সব নমুনা সরীসৃপদের নিয়ে গবেষণা এবং তাদের শনাক্ত করার জন্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর সংগ্রহ করা নমুনাগুলির বড় অংশই ভারতে রয়েছে।
সেই বিপুল সংগ্রহের মধ্য থেকে পার্সিয়ান লং টেইলড ডেজ়ার্ট লিজ়ার্ডের লেকটোটাইপটি খুঁজে বার করার কাজটা কঠিন ছিল। দুই বিজ্ঞানী সেটাই করেছেন।’
শুধু ভারত নয়, সারা দুনিয়ার প্রাণীবিজ্ঞানীদের মধ্যে যাঁরা সরীসৃপদের নিয়ে গবেষণা করেন, তাঁদের সবার কাছেই ফার্দিনান্দ স্তোলিচকার কাজ বিশেষ ভাবে সম্মানিত। সেই বিজ্ঞানীর বহু পুরোনো সংগ্রহগুলির মধ্যে থেকে একটি বিশেষ প্রজাতিকে চিহ্নিত করার নমুনাটি খুঁজে বার করার এই উদ্যোগ ইতিমধ্যেই প্রাণীবিজ্ঞান সংক্রান্ত পত্রিকা ‘জ়ুট্যাক্সা’–তে প্রকাশিত হয়েছে।