উদয়ন গুহ ও বিতর্ক যেন সমার্থক। শিলিগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাতেও হালকা করে ছুঁয়ে গেল বিতর্ক। এবারও সেই উদয়ন গুহ। একদা ফরোয়ার্ড ব্লকের দাপুটে নেতা কমল গুহর ছেলে। বর্তমানে তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন ভরা সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধমক খেলেন। হালকা মেজাজে হলেও, চোখ এড়াল না। বেফাঁস মন্তব্যই কাল হল উদয়নের।
মন্তব্যটি করে ফেলেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে
সোমবার শিলিগুড়িতে ব্যবসায়ী, উদ্যোগপতিদের সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একই সারিতে বসার ব্যবস্থা হয়েছিল রাজ্যের তিন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মলয় ঘটক এবং উদয়ন গুহের। ছিলেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেবও। মিটিংয়ের শেষে অরূপ, মলয়, উদয়নদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, কিছু বক্তব্য পেশ করার জন্য। সবার বক্তব্যের পরে বক্তা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহর পালা। তিনি মঞ্চে উঠেই বেফাঁস মন্তব্য করে বসলেন। তত্ক্ষণাত্ সামাল দেওয়া চেষ্টাও করেন। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। দৃশ্যতই অপ্রস্তুত দেখায় উদয়নকে। কারণ মন্তব্যটি করে ফেলেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে।
নিজেকে ‘দুর্মুখ’ বলে পরিচয় দেন
উদয়ন গুহর মুখে লাগাম নেই, এ কথা দল-শত্রু দুই পক্ষই জানে। নিজেও সে কথা স্বীকার করেন। বলেন, 'আমি দুর্মুখ'। সোমবার শিলিগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে সে কথাই আবার মনে করিয়ে দিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী। আর ঠিক সেখানেই তৈরি হল মুহূর্তের অস্বস্তি। উপস্থিত সকলের উদ্দেশে প্রথমেই তিনি নিজেকে ‘দুর্মুখ’ বলে পরিচয় দেন। তার পর বলেন, 'আমার এই স্বভাবের জন্যই দিদি, মানে মুখ্যমন্ত্রী, আমায় একটু ভয় পান!' এই মন্তব্যেই ভ্রুকুঞ্চন মুখ্যমন্ত্রীর। সঙ্গে সঙ্গে মাইক্রোফোন তুলে বলেন, 'আমি কাউকে ভয় পাই না!'
'ওকে একটা রসগোল্লা খাইয়ে দিও'
বুঝতে পেরে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন উদয়ন। বলেন, 'আমাকে না দিদি, আমার মুখকে।' তাতে আরও জোর গলায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'তোমার মুখকেও আমি ভয় পাই না।' তবে মুহূর্তের মধ্যে পরিস্থিতি হালকা করে দেন মমতা নিজেই। হাসতে হাসতে বলেন, 'আমি তো আগেই বলেছি, এটা দিনহাটা নয়।' উদয়নও এরপর আর বিতর্ক বাড়াননি। বরং বলেন, 'উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন যদি কেউ চান, তা হলে মুখ্যমন্ত্রীকে সবাইকেই সমর্থন জানাতে হবে।' বক্তব্য শেষে ফের হালকা মেজাজে মাইক্রোফোন তোলেন মমতা। বলেন, 'এই যে বলল, দুর্মুখ! কিন্তু আজ ভাল বলেছে। ওকে একটা রসগোল্লা খাইয়ে দিও।'
এই ছোট্ট ঘটনার মধ্যেই উঠে এল দিদি-উদয়ন সম্পর্কের মজার রসায়ন। কখনও ঠাট্টা, কখনও তিরস্কার, কিন্তু শেষমেশ রসগোল্লায় মিষ্টি শেষ।