• ভেঙে দেওয়া হলো বিতর্কে জেরবার রঘুনাথপুর পুরসভা
    এই সময় | ২০ মে ২০২৫
  • এই সময়, পুরুলিয়া: শুক্রবারই জেলাভিত্তিক সাংগঠনিক রদবদলের তালিকা প্রকাশ করেছিল তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্ব। নতুন ভাবে জেলা সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর আগেই বড়সড় ধাক্কা খেল শাসকদল। সোমবার বিকেলে পুরসভার কাছে রাজ্য পুর এবং নগরোন্নয়ন দপ্তরের নির্দেশিকা এসে পৌঁছয়। সেখানে জানানো হলো, ভেঙে দেওয়া হচ্ছে রঘুনাথপুর পুরসভা!

    পুরসভা সূত্রের খবর, নির্দেশিকায় (৩৪৯ - ইউডিএমএ - ১৫০১১(২২)৪ - ২০২৫এলএস - এমএ) স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ১৯৯৩ সালের পুর আইনের ৪৩১ নম্বর ধারা (সাব–সেকশন ২) মোতাবেক ভেঙে দেওয়া হচ্ছে এই পুরসভা। শুধু তাই নয়, ৪৩১ ধারার সাব সেকশন–৩ অনুযায়ী, আপাতত এই পুরসভায় প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হচ্ছে রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসককে।

    রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান তরণী বাউড়ি এ দিন সন্ধ্যায় সেই নির্দেশিকার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের সেই নির্দেশিকা পেয়েছি। যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা মেনে নিয়েই পুরসভা ভেঙে দেওয়া হয়েছে।’

    ১৩ সদস্যের রঘুনাথপুর পুরসভায় তৃণমূলের প্রতিনিধি ১০, কংগ্রেসের ২ এবং বিজেপির একজন প্রতিনিধি রয়েছেন। ঘটনা হলো, ২৪ এপ্রিল শাসকদলের ছ’জন এবং কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি পুরপ্রধানের বিরুদ্ধেই অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন। সূত্রের খবর, তৃণমূলেরই কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল না পুরপ্রধানের।

    তারই ফলস্বরূপ অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছিল। ক্ষুব্ধ প্রতিনিধিদের বক্তব্য ছিল, পুরসভা চালাতে ব্যর্থ হয়েছেন পুরপ্রধান। পাশাপাশি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উপেক্ষা করে একক ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছিল অনাস্থা প্রস্তাবে। তার পরেই শুরু হয়েছিল গুঞ্জন।

    পুর আইন অনুযায়ী, অনাস্থা প্রস্তাব আনা হলে ১৫ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যানকে সভা ডাকতে হয়। কিন্তু সেই সময়সীমাও পেরিয়ে গিয়েছে। এর পরে পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যানেরও সভা ডাকার কথা। নিয়ম অনুযায়ী, সভা ডাকার তিন দিন আগে পুর প্রতিনিধিদের নোটিস দিতে হয়। ঘটনা হলো, সময় পেরিয়ে গেলেও ভাইস চেয়ারম্যানও সেই সভা ডাকার বিষয়ে আদৌ সক্রিয় কোনও ভূমিকা নেননি।

    এ বিষয়ে পুরপ্রধান এবং সহকারী পুরপ্রধান উদাসীন থাকায় অনাস্থা প্রস্তাবে সই করা তিন জন প্রতিনিধি তলবি সভা ডাকার সিদ্ধান্ত নেন। সেই তলবি সভা হওয়ার কথা ছিল ২১ মে। তার আগেই ভেঙে দেওয়া হলো রঘুনাথপুর পুরসভা।

    পুরসভা ভেঙে দেওয়া প্রসঙ্গে অনাস্থা প্রস্তাবে সই করা তৃণমূলের পুরপ্রতিনিধি প্রণব দেওঘরিয়া অভিযোগ তোলেন, দরপত্র না–ডেকে একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। যেমন পুরসভা চত্বরেই একটি হলঘর তৈরি করা হয়েছে, যার জন্য কোনও ধরনের দরপত্রই ডাকা হয়নি।

    এ ছাড়াও শহরের শহিদ ক্ষুদিরাম মূর্তির কাছে জাতীয় পতাকার একটি স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানেও কোনওরকম দরপত্র দেওয়া হয়নি। এমনই একাধিক বেআইনি কাজকর্মের উদাহরণ রয়েছে। তাঁর আরও অভিযোগ, পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে।

    প্রণব বলেন, ‘বোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে, এ মর্মে আমাদের কাছে সরকারি ভাবে কোনও খবর নেই। আমাদের তলবি সভার প্রস্তুতি যেমন চলছিল, সে ভাবেই চলছে। তবে যদি বোর্ড ভেঙেই দেওয়া হয়ে থাকে, তা হলে দুর্নীতি চাপা দেওয়ার জন্যই সেটা করা হয়েছে।’

    সেখানেই শেষ নয়। ক্ষুব্ধ পুরপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তাঁরাও জনগণের ভোটে জিতেই এই দায়িত্ব নিয়েছেন। তা হলে পুরসভা পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁদের মতামতকে কেন গুরুত্ব দেওয়া হবে না, এমন প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা। যদিও এই অভিযোগ মানতে চাননি পুরপ্রধান তরণী বাউড়ি।

  • Link to this news (এই সময়)