• স্থায়ী উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে, সুদিনের অপেক্ষায় গবেষকরা
    এই সময় | ২০ মে ২০২৫
  • সুমন ঘোষ, মেদিনীপুর

    একটা সময়ে অবিভক্ত মেদিনীপুরের সব কলেজই ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত। যদিও তখন কলেজের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। ১৯৭৮ সালে মেদিনীপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। দায়িত্ব দেওয়া হয় খড়গপুর আইআইটির অধ্যাপক তথা বিখ্যাত গণিতজ্ঞ অনিলকুমার গায়েনকে।

    ঠিক হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হবে জেলারই কৃতী সন্তান পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নামে। ১৯৮১ সালে প্ল্যানিং কমিটি তা মঞ্জুর করে এবং ওই বছরেই ভূপেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন।

    ১৯৮৫ সালের ৫ জুন বিশ্ববিদ্যালয় শুরু হয় ৩০টি কলেজ এবং ৬টি স্নাতকোত্তর বিষয় দিয়ে। সেগুলো ছিল নৃতত্ত্ব, অ্যাপ্লায়েড ম্যাথামেটিক্স উইথ ওসেনোলজি অ্যান্ড কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, কমার্স উইথ ফার্ম ম্যানেজমেন্ট, ইকোনমিক্স উইথ রুরাল ডেভেলপমেন্ট, লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স, পলিটিক্যাল সায়েন্স উইথ রুরাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।

    তারপরে কাঁসাই দিয়ে ঢের জল গড়িয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত কলেজ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯। সে তালিকায় সরকারি, অটোনমাস থেকে সেল্ফ ফিনান্সিং- সব ধরনের কলেজ রয়েছে। আর স্নাতকোত্তর বিভাগের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৭টি। কিন্তু স্টাফ প্যাটার্নে কোনও পরিবর্তন ঘটেনি বলে অভিযোগ।

    উল্টে শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীর সংখ্যা কমেছে। শিক্ষক থাকার কথা ১৬২ জন, আছেন ১৩৭ জন। ২৫ জন আধিকারিকের দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে ২১ জনকে। ১৩৭ জন শিক্ষাকর্মীর মধ্যে রয়েছেন ১০০ জন। ফলে পঠন-পাঠন থেকে গবেষণা-ব্যাঘাত ঘটছে সর্বত্র।

    কিন্তু এ সব দেখবেন কে?

    এতদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য ছিলেন না। ২০২১ সালের ৫ জুলাই পর্যন্ত শেষ স্থায়ী উপাচার্য ছিলেন রঞ্জন চক্রবর্তী। তারপরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর শিবাজী প্রতিম বসুকে উপাচার্য করে রাজ্য সরকার।

    তা নিয়ে মামলা করে জাতীয়তাবাদী অধ্যাপক ও গবেষক সঙ্ঘ। সঙ্ঘের দাবি ছিল, উপাচার্য হতে গেলে অধ্যাপক হিসেবে ন্যূনতম দশ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। যা প্রফেসর বসুর ছিল না। ফলে ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি তাঁকে সরে যেতে হয়।

    তারপরে পবিত্র চক্রবর্তীকে উপাচার্য করে পাঠায় উচ্চশিক্ষা দপ্তর। কিন্তু রাজ্যপাল ও রাজ্যের টানাপড়েনে তাঁকেও সরে যেতে হয় মাস তিনেকের মধ্যে। তারপর প্রায় মাস চারেক উপাচার্যহীন অবস্থায় চলে বিশ্ববিদ্যালয়।

    পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপক হিসেবে সুশান্ত চক্রবর্তীকে উপাচার্য করে পাঠান রাজ্যপাল। সম্প্রতি স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে যোগ দিয়েছেন দীপককুমার কর। এ বার সমস্যার সমাধান হবে বলে আশায় আছেন সকলে।

    বিদ্যাসাগর ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কেশবচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘গবেষণার যন্ত্র থেকে ছোট্ট পরীক্ষাগার, একাধিক বিষয়ে সমস্যা বেড়েই চলেছে। যে বিষয়গুলি আমরা বারবার কর্তৃপক্ষের গোচরেও এনেছি। কিন্তু কাজ হয়নি।’

    পরীক্ষাগারের বিভিন্ন সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল কলেজ অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি প্রফেসর অ্যাসোসিয়েশনের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সভাপতি বিশ্বপতি জানা। তিনি বলেন, ‘নতুন উপাচার্য সব বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন। সমাধানের জন্যও উদ্যোগী হয়েছেন।’

    এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জয়ন্তকুমার নন্দী বলেন, ‘গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় বিকল যন্ত্রগুলো সারানোর জন্য ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করা হয়েছে। উচ্চশিক্ষা দপ্তরকেও জানানো হয়েছে।’ স্থায়ী উপাচার্য দীপককুমার কর অবশ্য ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ ঘুরে দেখেছেন।

    প্রত্যেকের সঙ্গে কথাও বলেছেন। পরীক্ষাগারগুলোর হালও দেখেছেন নিজের চোখে। উপাচার্যের কথায়, ‘গবেষণাগারের উন্নতির জন্য আমরা সব রকম পদক্ষেপ করব। বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন সমস্যার প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। গবেষণাগারের উন্নতির পাশাপাশি সব সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছি।’

  • Link to this news (এই সময়)