• রোজ ১৬ কিমি যাতায়াত, আধপেট খাওয়া! মাধ্যমিকে উজ্জ্বল সঙ্গীতা, আরও পড়তে পিতৃহারা মেয়ে পাশে চায় আপনাকেও...
    ২৪ ঘন্টা | ২০ মে ২০২৫
  • শ্রীকান্ত ঠাকুর: সংগ্রামী সুস্মিতার আশ্চর্য জয়যাত্রা, শিক্ষক হবার স্বপ্নে জেদ ও জয়ের গল্প। দীর্ঘ চার বছর মায়ের সঙ্গে দিনমজুরির কাজ করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে এসেছে দক্ষিণ দিনাজপুরের কালিকাপুর গ্রামের সুস্মিতা পাহান। কোনও দিন কাজ জুটেছে, কোনও দিন জোটেনি-তবুও দুচোখ ভরা স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে সে এগিয়ে গিয়েছে নিজের লক্ষ্যে। 

    পিতৃহারা এই কিশোরীর লক্ষ্য-শিক্ষক হয়ে নিজের পরিবার ও সমাজের উন্নয়ন। বালুরঘাট নালন্দা বিদ্যাপীঠ থেকে পড়াশোনা করে এবারের উচ্চমাধ্যমিকে সুস্মিতা পেয়েছে ৪২৮ নম্বর। পরিবারে চরম আর্থিক অনটন, নেই পর্যাপ্ত পড়াশোনার সুবিধা-তবুও থেমে থাকেনি সে। তিনজন গৃহ শিক্ষকের কাছে পড়েছে, তাদের বেতন জোগাড় করত নিজেই। 

    রোজ ৮ কিলোমিটার দূরের স্কুলে যেতে হত সাইকেলে, কারণ গাড়ি ভাড়া দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। শুধু তাই নয়, পড়াশোনার পাশাপাশি সংসার সামলানোর কাজেও সমানভাবে সাহায্য করেছে মা সিজলি পাহানকে। ১৬ বছর আগে পরিবারের একমাত্র রোজগেরে শ্যামল পাহানের হঠাৎ মৃত্যুতে জীবন ওলটপালট হয়ে যায়। তখন থেকেই দিনমজুরির কাজ শুরু করেন মা সিজলি পাহান, একাই দুই মেয়েকে মানুষ করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন।

    ছোট মেয়ে সঙ্গীতা পাহান এ বছর মাধ্যমিক পাশ করেছে প্রথম বিভাগে। মাটির দেওয়াল আর টিনের ছাউনির ছোট ঘরে কখনও পেটভরে খাওয়া জোটে না, তবুও মেয়ে দু’টির শিক্ষায় ছাড় দেননি মা। তবে এখন সবচেয়ে বড় চিন্তা-উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা সুস্মিতার সামনে স্নাতক স্তরে সাম্মানিক ইতিহাস নিয়ে পড়ার ইচ্ছা, কিন্তু অর্থের অভাবে তা অনিশ্চিত। এখনও অবধি কোনও সরকারি সাহায্য এই পরিবার পায়নি। নেই আবাস যোজনার ঘর, নেই অন্য কোনও প্রকল্পের সুবিধা।

    কালিকাপুর একটি সম্পূর্ণ আদিবাসী সম্প্রদায়ের গ্রাম। গ্রামে আজও কোনও স্কুল নেই, অন্য গ্রামে গিয়ে স্কুলে পড়তে হয়। তবুও নিজের লক্ষ্যে অবিচল সুস্মিতা। তার স্বপ্ন, শিক্ষক হয়ে সমাজের অন্য মেয়েদেরও পড়াশোনায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

    চরম আর্থিক অনটনের মাঝেও মেয়ের এই অসামান্য সাফল্যে গর্বিত মা সিজলি। তবে তিনি শঙ্কিত ভবিষ্যত নিয়ে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ কোথা থেকে আসবে, কীভাবে চলবে সংসার। সমাজ ও প্রশাসনের সাহায্যই এখন একমাত্র ভরসা।


    সুস্মিতা পাহান চায় একটু সহানুভূতি, একটু সহায়তা-যাতে তার স্বপ্নের শিক্ষকতা আর স্বপ্ন দেখা সমাজ গড়ার পথে সে আরও একধাপ এগিয়ে যেতে পারে।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)