• ‘অনিয়ম আর দুর্নীতি এক জিনিস নয়’, প্রাথমিকে ৩২ হাজার চাকরি বাতিল মামলায় হাইকোর্টে দাবি এজি-র
    এই সময় | ২০ মে ২০২৫
  • গত শুনানিতে প্রাথমিকে ৩২ হাজারের চাকরি বাতিলে সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে ‘বেআইনি’ তকমা দিয়েছিল পর্ষদ। আর মঙ্গলবার তার থেকে এক ধাপ এগিয়ে পর্ষদের দাবি, দুর্নীতি আর অনিয়ম এক জিনিস নয়, তা বুঝতে ভুল করেছে সিঙ্গেল বেঞ্চ।

    ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি খারিজ সংক্রান্ত সিঙ্গল বেঞ্চের সিদ্ধান্তে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ আগেই দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। এ দিন এই মামলাটি ফের ওঠে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে। মামলায় সওয়াল করতে গিয়ে পর্ষদের তরফে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল(এজি) কিশোর দত্ত আদালতে বলেন, ‘অনিয়ম আর দুর্নীতি এক জিনিস নয়’।

    এজির সওয়াল ছিল, ‘দুর্নীতির কথা বলা হলেও কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি একক বেঞ্চ। দুর্নীতির চিরাচরিত সংজ্ঞাতে টাকা কে নিয়েছে তার প্রমাণ দিতে হয়। সিঙ্গল বেঞ্চ শুধু দুর্নীতির অভিযোগকে দুর্নীতি হয়েছে বলে ধরে নিয়েছে। দুর্নীতির কোনও প্রমাণ নেই।’

    পাশাপাশি, সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি (প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়) নিজেই এক্ষেত্রে অনুসন্ধানের কাজ করেছেন বলেও ইঙ্গিত করেন এজি। তিনি বলেন, ‘বিশাল সংখ্যক চাকরি প্রার্থীকে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছিল। বাস্তবে যে ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছিল, হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ তার থেকে বেশি ‘হাইপথিটিক্যাল’ বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া করেছে। সিলেকশন কমিটিতে অভিজ্ঞদের রাখা হয়। আদালত বান্ধবের পরামার্শ নিয়েছিল সিঙ্গল বেঞ্চ।’

    তাঁর সংযোজন ছিল, ‘অকৃতকার্যদের বিষয়ে সিঙ্গল বেঞ্চ যেন আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল এবং সেই পথেই রায়ের দিয়ে এগিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা সিঙ্গেল বেঞ্চ নিজে এই মামলাকে জনস্বার্থ মামলার মতো দেখেছে। নিজেই অনুসন্ধান করেছে।’

    পাল্টা এজিকে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘দুর্নীতি করে নিয়োগের যখন অভিযোগ উঠেছে, সেই সময়ে বিচারপতি কি শুধু চেম্বারে বসে নথি দেখে বিচার শেষ করতে পারেন? আপনি হলে কী করতেন?’

    এজি নিজের সওয়ালে আরও বলেন, ‘সিঙ্গল বেঞ্চ কোনও সরকারি আধিকারিকের দুর্নীতিতে যুক্ত বা রাজনৈতিক প্রভাবের কথা ইন্টারভিউতে উল্লেখ করেনি। যদি ধরেও নেওয়া যায় অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট হয়নি, তাহলেও চাকরি বাতিল করা যায় না। কারণ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, বিশাল সংখ্যক পরীক্ষার্থী যেখানে যুক্ত রয়েছে, সেখানে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হয় বিচার ব্যবস্থাকে। অথচ সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি এক ঘণ্টার নোটিসে জেলবন্দি প্রাক্তন পর্ষদ সভাপতিকে এজলাসে হাজির করে জেরা করেছিলেন। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁরা কেউ ইন্টারভিউ বোর্ডে ছিলেন না।’

    উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার ভিত্তিতে ২০১৬ সালে নিয়োগ হয়েছিল রাজ্যের বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুলগুলিতে। কিন্তু সেই নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। মামলাটি গিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চে। ২০২৩ সালের মে মাসে তিনি ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিল রাজ্য। সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছিল বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। এর পর সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা হলেও সর্বোচ্চ আদালত তা ফের হাইকোর্টেই ফেরত পাঠায়। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হতে পারে আগামী ১২ জুন।

  • Link to this news (এই সময়)