নিজের বাড়ির থেকে নিরাপদ জায়গা আর কী হতে পারে? বিশেষ করে সঙ্গে যখন বাবা আছে। এমনটাই হয়তো ভেবেছিল ১২ বছরের মেয়েটা। কিন্তু তাদের বাড়ি তো পাকা বাড়ি নয়। মাটির দেওয়াল, উপরে অ্যাজবেসটসের ছাদ। সোমবার রাতের প্রবল ঝড়বৃষ্টির মোকাবিলা করতে পারেনি সেই পলকা বাড়ি। ছাদ ফুঁড়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়েছিল বজ্রপাতের বিপদ। মৃত্যু হয়েছে ১২ বছরের প্রিয়া গরাইয়ের। মর্মান্তিক ঘটনাটি বাঁকুড়ার সিমলাপাল থানা এলাকার। মেয়ের অকাল মৃত্যুর পর শোকস্তব্ধ বাবার আক্ষেপ, যদি পাকা বাড়ি থাকত!
ঠিক কী ঘটেছিল?
প্রিয়ার বাবা প্রশান্ত গরাই-ও বজ্রপাতে গুরুতর আহত হয়েছেন। একটি টেম্পো চালিয়ে সংসার চালান তিনি। সিমলিপালের পচাপাথর গ্রামে তাঁদের বাড়ি। সোমবার রাতে প্রিয়া ও তার এক ভাইপোকে নিয়ে এক ঘরে শুয়েছিলেন প্রশান্ত। অন্য ঘরে ছিলেন তাঁর স্ত্রী ও ছেলে। প্রশান্ত জানিয়েছেন, মাঝরাতে আচমকাই প্রচণ্ড শব্দে গোটা বাড়ি থরথর করে কেঁপে উঠেছিল।
চমকে ঘুম ভেঙে উঠে পড়েছিলেন তিনি। প্রথমে ঘুমের ঘোরে বুঝতেই পারেননি কী ঘটেছে। ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন বাড়িতে বাজ পড়েছে। এর পরে তাঁর চোখ গিয়েছিল পাশে। সেখানে নিথর অবস্থায় পড়ে ছিল তাঁর মেয়ে। অনেক ডাকাডাকির পরেও প্রিয়া সাড়া না দেওয়ায় দ্রুত তাকে খাতড়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রশান্ত। কিন্তু চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, হাসপাতালে আনার আগেই প্রিয়া গরাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।
আবাস যোজনা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েনের মধ্যে এখনও পাকা বাড়ি পাননি প্রশান্ত। মেয়েকে হারিয়ে সেই আক্ষেপ যাচ্ছে না প্রশান্ত গরাইয়ের। তিনি বলেছেন, ‘সোমবার রাতে হঠাতই বাজ পড়ে চারিদিকটা অন্ধকার হয়ে যায়। তার পরেই এই দুর্ঘটনা। আজ পাকা বাড়ি থাকলে এ ভাবে আমার মেয়েকে হারাতে হতো না।’
প্রশান্ত ও তাঁর পরিবারের দাবি, বারবার তাঁরা পাকা বাড়ির জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন। কিন্তু এখনও শিকে ছেঁড়েনি তাঁর।