রবীন রায়, আলিপুরদুয়ার: হিমালয়ের সিঞ্চুলা রেঞ্জে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৮০০ ফুট উচ্চতায় বক্সা পাহাড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে একসময় ঘোড়া ও খচ্চরের ব্যবহারের প্রচলন ছিল। বক্সা পাহাড়ের ১৩টি পাহাড়ি গ্রামের বাসিন্দারা পণ্য পরিবহণের জন্য এই ঘোড়া ও খচ্চর ব্যবহার করতেন। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত বক্সা পাহাড়ে এই ঘোড়া ও খচ্চরেকে পণ্য পরিবহণে কাজে লাগানো হতো। তারপর বন্ধ হয়ে যায়। এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবুজ সঙ্কেত দেওয়ায় অনেক বছর পর সেই বক্সা পাহাড়ে ফের ঘোড়া পরিষেবা ফিরছে। পর্যটকরা ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে বক্সা ফোর্টে যেতে পারবেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই সিলমোহরকে দু’হাত ভরে স্বাগত জানিয়েছে জেলার পর্যটন মহল।
ডুয়ার্স ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ওয়েলফেলার সোসাইটির সভাপতি পার্থসারথি রায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় জেলার পর্যটন সার্কিটে এক নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। আমরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি।
১৫ জুন থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্যপ্রাণীদের প্রজননের কারণে তিন মাস জঙ্গল বন্ধ থাকে। ১৬ সেপ্টেম্বর জঙ্গল খুলবে। তারপর থেকে যে কোনও দিন ঘোড়ার খুঁড়ের টগবগ আওয়াজ শোনা যেতে পারে ঐতিহাসিক বক্সা ফোর্টে। বক্সা ফোর্ট যেতে ফের ঘোড়া পরিষেবা চালু হলে বক্সা পাহাড়ের অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে। এমনটাই মনে করছেন বক্সার পাহাড়ি গ্রামগুলির জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ।
আলিপুরদুয়ারের শিল্পপতি অরিন্দম ঘোষ বক্সা ফোর্টে ঘোড়া পরিষেবা চালুর প্রস্তাব সোমবার উত্তরবঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়েছিলেন। প্রস্তাবে মুখ্যমন্ত্রী সায় দেওয়ায় খুশি অরিন্দমবাবু। তিনি মঙ্গলবার বলেন, পর্যটকরা আলিপুরদুয়ারে এলে তাঁরা প্রথমেই বক্সা ফোর্টে যেতে চান। মুখ্যমন্ত্রী প্রস্তাবে সায় দেওয়ায় বক্সা পাহাড়ের ২০ জন যুবককে ঘোড়া চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আমি নিজেই পরীক্ষামূলকভাবে পাঁচটি ঘোড়া কিনে দেব। আমাদের ধারণা, বক্সা ফোর্টে ফের ঘোড়া পরিষেবা চালু হলে সেখানকার স্থানীয় অর্থনীতিতে জোয়ার আসবে। বাড়বে পর্যটকদের আনাগোনাও।
সমতল সান্তলাবাড়ির জিরো পয়েন্ট থেকে বক্সা ফোর্টের দূরত্ব আড়াই কিমি। এই আড়াই কিমি রাস্তার পুরোটাই পাহাড়ের পাকদণ্ডি বেয়ে উঠতে হয়। পহেলগাঁও, বৈষ্ণদেবী মন্দির বা অমরনাথ যাত্রায় ঘোড়া ব্যবহারের প্রচলন আছে। মুখ্যমন্ত্রী সায় দেওয়ায় এবার বক্সা ফোর্ট যেতেও ঘোড়া পরিষেবা চালু হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র বলে মনে করছে জেলার পর্যটন মহল। বক্সা হোমস্টে ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক লালসিং ভুজেল বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে বক্সা ফোর্টে ব্যাপকভাবে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে তাতে কোনওরকম সন্দেহ নেই। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা অপূর্ব সেন বলেন, বক্সা ফোর্টে হাতি ঘোড়া পরিষেবা চালু হতে পারে। চালু হতে পারে হাতি সাফারিও। তবে উপর মহল থেকে এনিয়ে যেভাবে নির্দেশ আসবে সেই মতোই কাজ হবে। ফাইল চিত্র।