মারধরের ভয়ে ভিনরাজ্যে চুল কিনতে আর যাচ্ছেন না কান্দির ফেরিওয়ালারা
বর্তমান | ২১ মে ২০২৫
সংবাদদাতা, কান্দি: কান্দি মহকুমায় ঝরা চুলের ব্যবসা বেশ লাভজনক। এই মহকুমার বহু ফেরিওয়ালা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে মহিলাদের মাথার ঝরা চুল কেনেন। বিনিময়ে টাকা নয়, প্লাস্টিকের কাপ, গ্লাস, টিপের পাতা প্রভৃতি দেন। কান্দি মহকুমায় ফিরে বড় ব্যবসায়ীদের কাছে সেই চুল বিক্রি করেন। কিন্তু সম্প্রতি ভিনরাজ্যে এই জেলার শ্রমিকরা আক্রান্ত হওয়ায় চুল কিনতে যাচ্ছেন না ফেরিওয়ালারা। চুল কেনার কাজ বন্ধ রেখে কেউ গ্রামেই টোটো চালাচ্ছেন, আবার কেউ দিনমজুরের কাজ করছেন। এই পরিস্থিতিতে কান্দি মহকুমায় চুলের চাহিদা বাড়লেও জোগান নেই।
এই মহকুমার পাঁচটি ব্লক থেকেই কয়েকহাজার ব্যক্তি বহু বছর ধরে ভিনরাজ্যে গিয়ে চুল কিনছেন। বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লিতে গিয়ে প্লাস্টিকের নানা সামগ্রী, সাজার জিনিসের বদলে মহিলাদের মাথার ঝরে যাওয়া চুল কেনেন তাঁরা। ভরতপুর-১ ব্লকের ইব্রাহিমপুরের শ্রমিক টুলাব শেখ বলেন, এটা খুব পরিশ্রমের কাজ। তবে দুই সপ্তাহ চুলের ফেরি করলে সবার একমাসের সংসার খরচ উঠে যায়। ভাগ্য সহায় হলে ফের ওই কাজ করতে পারব।
ভিনরাজ্যে সাম্প্রতিক ঘটনায় তাঁদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তাঁদের অনেকেই কাজ বন্ধ রেখেছেন। বড়ঞা থানার চৈতন্যপুরের আলাহিম শেখ বলেন, মোবাইলে দেখেছি অন্য রাজ্যে বাঙালি শ্রমিক দেখলেই মারধর করে সব কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। তাই আমরা সেখানে যেতে ভয় পাচ্ছি। আপাতত সেজন্য ওই কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
ভিনরাজ্যে চুল কেনার বদলে এই ব্যক্তিরা এখন অন্য পেশায় নেমে পড়েছেন। কেউ টোটো চালাচ্ছেন, কেউ আবার দিনমজুরের কাজ করছেন। সালার থানার তালিবপুরের সবুজ শেখ, হালিম শেখ এখন গ্রামেই রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। ভরতপুরের মীরাপাড়ার আক্তার আলি টোটো চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, এখন দৈনিক ১০০টাকায় টোটো ভাড়া নিয়ে রোজগার করছি। তবে অন্য রাজ্যে গণ্ডগোল বন্ধ হলেই ফের চুলের ফেরি শুরু করব। কারণ চুলের ব্যবসার মতো অন্য কিছুতে ততটা লাভ করতে পারব না।
ভরতপুরের চুলের মহাজন সৈয়দ আবদুল আজিম বলেন, স্থানীয় ফেরিওয়ালারা ভিনরাজ্যে যেতে পারছেন না। তাই চুলের আমদানি কমে গিয়েছে। চুলের দাম কিলোগ্রাম প্রতি একহাজার টাকা করে বেড়ে গিয়েছে।