ধ্বংসপ্রায় লালগড় রাজবাড়ি সংস্কার ও পর্যটনকেন্দ্র তৈরির দাবি বাসিন্দাদের
বর্তমান | ২১ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: কংসাবতী নদীর তীরে ছোট্ট জনপদ লালগড়। নদী থেকে কিছুটা দূরেই লালগড় রাজবাড়ি। বহু গল্পগাথা ছড়িয়ে আছে এই রাজবাড়ি ঘিরে। বাংলার নবাব আলিবর্দি খাঁর দেওয়া ‘সাহস রায়’ উপাধি আজও বহন করে চলেছেন এই রাজবাড়ির উত্তরপুরুষরা। রাজবাড়ির ঐতিহ্য রক্ষায় আজও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উত্তরপুরুষ অশীতিপর প্রশান্তকুমার সাহস রায়। সাহস রায় রাজারা একসময়ে লালগড়ে রাজত্ব করতেন। ইউরোপের গথিক শৈলীতে নির্মিত এই বিশাল রাজবাড়ি জৌলুস হারিয়েছে বহু আগেই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সাহস রায়দের রাজত্ব চলে যায়। সাড়ে তিনশো বছরের ক্ষয়িষ্ণু রাজবাড়ি অতীত স্মৃতি নিয়ে এখন কোনওমতে টিকে রয়েছে। লালগড় এস আই চকের সামান্য দূরে সেই প্রাচীন রাজবাড়িতেই আজও থাকেন রাজ পরিবারের বর্তমান বংশধরদের একাংশ। ভিতর মহলের ফাঁকা জায়গা ঝোপঝাড়ে ভরে গিয়েছে। দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে। দেওয়ালের বহু জায়গায় ইট বেরিয়ে পড়েছে। বিশাল রাজবাড়ির অলিন্দে ছোট দেওয়াল পার্টিশন দিয়ে ঘেরা। রাজবাড়ির একাধিক ভাঙা দরজা কোনওরকমে ঠেস দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। সাহস রায় রাজারা একসময় রাজবাড়ির প্রাঙ্গণে দরবারে বসাতেন। কংক্রিটের সিংহাসন বানিয়ে জায়গাটি চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। শোনা যায়, রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা গুণচন্দ্র ও উদয়নচন্দ্র ভট্ট মধ্যপ্রদেশের এটোয়া জেলা থেকে ভাগ্য সন্ধানে এসেছিলেন। তাঁদের হাত ধরেই রামগড় ও লালগড় রাজবংশের পত্তন হয়েছিল। কথিত আছে, বর্গি আক্রমণের সময় নবাব আলিবর্দি সৈন্যদল নিয়ে মেদিনীপুরের কাছে শিবির করেছিলেন। সেই সময়ে নবাব শিবিরে একটি বাঘ উৎপাত করত। নবাবের সৈন্যরা বাঘটিকে মারতে ব্যর্থ হলে, দুই ভাই বাঘটিকে শিকার করেন। নবাব দুই ভাইয়ের সাহসে মুগ্ধ হয়ে তাদের ‘সাহস রায়’ উপাধি দিয়েছিলেন। পূর্বের সেই প্রভাব প্রতিপত্তি আজ না থাকলেও প্রাচীন সেই উপাধি আজও বহন করে চলেছেন বংশের উত্তরপুরুষরা। রাজা উদয়চন্দ্রের উত্তরপুরুষ প্রশান্তকুমার সাহস রায় বলেন, প্রজাপালক হিসেবে সাহস রায় রাজাদের সুনাম ছিল। ঠাকুরদা যোগেন্দ্র নারায়ণ সাহস রায় সমাজ কল্যাণমূলক নানা কাজ করে গিয়েছেন। ঝাড়গ্রাম শহরের লালগড় মাঠে ব্রিটিশ সরকারের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সভার ব্যবস্থা করেছিলেন। মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া একবার রাজবাড়ির সংস্কারের কথা বলেছিলেন। আমিও রাজি ছিলাম। শরিকি জটিলতায় সে কাজ করা যায়নি। লালগড় রাজবাড়ির গৌরবময় ঐতিহ্য রক্ষায় এই বয়সেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অপর সদস্য অনুপ সাহস রায় বলেন, রাজবাড়ি ও মন্দিরগুলো সংরক্ষণ নিয়ে সাংসদ কালীপদ সরেনকে জানানো হয়েছে। উনি নিজেও কিছুদিন আগে রাজবাড়ি পরিদর্শন করে গিয়েছেন।
সরকার পাশে দাঁড়ালে ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এই রাজবাড়িটিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। বিনপুর-২ ব্লকের বাসিন্দা মুকুন্দরাম চক্রবর্তী বলেন, লালগড় রাজাদের উদ্যোগে রথযাত্র উৎসব শুরু হয়েছিল। এখনও ধুমধাম করে রথযাত্রা হয়। রাজবাড়িটি সংরক্ষণ করা হলে জায়গাটি জেলার অন্যতম পর্যটনস্থল হয়ে উঠতে পারে। লালগড় এস আই চকের এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, যে সাহস রায়রা প্রবল প্রতাপের সঙ্গে রাজত্ব চালাতেন তা এখন লোকগাথা হয়েছে। বংশধররা আর্থিক কষ্টে দিনযাপন করছেন। লালগড় রাজবাড়ির বংশধরদের দেখলে জলসাঘর সিনেমার বিশ্বম্ভর রায়ের কথা মনে পড়ে যায়। -নিজস্ব চিত্র