• আইএনটিটিইউসির কোর কমিটিতে নেই শিল্পাঞ্চলের প্রতিষ্ঠিত নেতারা
    বর্তমান | ২১ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: দুর্গাপুরে আইএনটিটিইউসির কোর কমিটি ঘোষণা করল তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেজে তা প্রকাশিত হতেই জোর চর্চা শিল্পাঞ্চল জুড়ে। আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে চেয়ারপার্সন করে ঘোষণা করা হয়েছে ১২ জনের কোর কমিটি। সেখানে ঋতব্রত ছাড়া সকলেই সদস্য। তালিকায় নেই শিল্পাঞ্চলের প্রতিষ্ঠিত কোনও শ্রমিক নেতা‌ই। দুর্গাপুরে নিজেদের শ্রমিক সংগঠন নিয়ে বার বার বিব্রত হতে হয়েছে শাসক দলকে। কারখানার রাশ নিজেদের হাতে রাখতে বিবদমান গোষ্ঠীদের মধ্যে অশান্তির সাক্ষী থেকেছে দুর্গাপুর। বহু প্রতিষ্ঠিত নেতার নামে বেনিয়মেরও অভিযোগ ওঠেছে। সেই দ্বন্দ্ব ঠেকাতেই কী বিধানসভা ভোটের আগে নতুন টিম, উঠছে প্রশ্ন। আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি বলেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্বই এই কমিটি গড়ে দিয়েছে। আমি নতুন কমিটি নিয়ে বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে বৈঠক করব। স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছি, আমাদের সংগঠন কারখানার নিয়োগে হস্তক্ষেপ করবে না। কোনওরকম বেনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। 

    কিছুদিন আগে নবান্ন সভাগৃহে শিল্প সংক্রান্ত একটি বৈঠক থেকেই দুর্গাপুরের শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। কমিটি বদল করা হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছিলেন। একটি নির্দিষ্ট বেসরকারি কারখানার নাম করে সেখানে সংগঠনে বদল আনার কথা বলেছিলেন। তারপর থেকেই দুর্গাপুরে শ্রমিক সংগঠনের রাশ কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে নেতাদের মধ্যে ইঁদুর দৌড় শুরু হয়। শেষে দেখা গেল, খোদ দলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতিকেই দুর্গাপুরের কোর কমিটির চেয়ারম্যান বানানো হয়েছে। বাকি সদস্যরা হলেন, মানস অধিকারী, রাজেশ কোনার, ভুবনেশ্বর মুখোপাধ্যায়, সুশান্ত রায়, লিটন সরকার, অভিষেক দে, হরদ্বীপ সিং, দেবব্রত কেশ, পূর্ণনন্দ চট্টোরাজ, শেখ আমিনুর রহমান, আকবর আলি। এঁরা নিজস্ব কারখানার ইউনিটের দায়িত্বে থাকলেও কেউ দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের ডাকাবুকো শ্রমিক নেতা নন। এবার তাঁদের হাতেই এলে সংগঠনের রাশ।

    একটা সময়ে কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন ভারতবরেণ্য শ্রমিক নেতা আনন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়। পরবর্তীক্ষেত্রে অপূর্ব মুখোপাধ্যায়, প্রভাত চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের মতো শ্রমিক নেতারা তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছে। শেষ দিকে সংগঠন দেখতেন সংগঠনের জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটক, কোষাধ্যক্ষ দীপঙ্কর লাহা। কিন্তু দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে বার বার শাসক দল ভোটের ফলে হোঁচট খেয়েছে। কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে উঠে এসেছে শ্রমিক নেতাদের একে অপরের বিরুদ্ধে সাবোতাজ করার ইতিহাস। বহু শ্রমিক নেতার বিরুদ্ধে লাগাম ছাড়া বেনিয়মের অভিযোগও মানুষের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে শ্রমিকদের মজুরি থেকে কাটমানি খাওয়া, শ্রমিকদের নিয়োগে টাকা নেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। আর এই কাটমানির ভাগ নিয়ে কারখানার বিভিন্ন গেটে হতো শ্রমিক নেতার চ্যালাদের লড়াই।  এই পরিস্থিতির বদল ঘটাতে সব পুরনো নেতাকেই ফেয়ারওয়েল দিয়ে দিল দল। এখন দেখার, নতুন এই টিম দুর্গাপুরের শ্রমিকদের প্রত্যাশা পূরণ করে দলের বিজয়রথ ওড়াতে বড় ভূমিকা নেয়, নাকি ফের আরও একটি গোষ্ঠীর জন্ম দেয়!
  • Link to this news (বর্তমান)