নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: পুলিসি ধরপাকড় বাড়তেই টান পড়েছে হেরোইন সরবরাহে। বিশেষ করে মাদকের খুচরো ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ আনা গিয়েছে। যার জন্য সামান্য পুরিয়াও খদ্দেরকে বিক্রি করতে গেলে বাড়তি সতর্কতা নিতে হচ্ছে মাদক কারবারিদের। যদিও চহিদায় এখনও লাগাম পড়েনি। আর সেই সুযোগেই দাম বাড়ছে হেরোইনের। আগে যে পুরিয়া ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন সেটাই ১৫০-১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। মাদক চক্রের সিন্ডিকেট দ্বারাই সেই দাম নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, বিগত দেড় বছরে পুলিসি তৎপরতায় হেরোইন ব্যবসার সিন্ডিকেটে আঘাত হানা গিয়েছে। ধরা পড়েছে পঞ্চাশের বেশি কারবারি ও পাচারকারী। বাজেয়াপ্ত হয়েছে প্রায় ৫০০ কেজি হেরোইন ও তার কাঁচামাল। যার বাজারমূল্য কয়েকশো কোটি টাকা। লাগাতার অভিযানের ফলে উৎপাদন ও সরবরাহ, উভয়েই বেশ কিছুটা লাগাম টানা গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। খদ্দের ও কারবারিদের মধ্যে মাদকের হাতবদল করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেই দাবি পুলিসের। পুরিয়া বিক্রি করতে ঘনবসতির পরিবর্তে রাতের অন্ধকারে খোলা মাঠের সুযোগ নিচ্ছে মাদক কারবারিরা।
কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার এসপি অমরনাথ কে বলেন, আমরা মাদক বিরোধী অভিযান লাগাতার চালাচ্ছি। বিপুল পরিমাণে মাদক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি বহু কারবারিও ধরা পড়েছে। এই ব্যবসা চিরতরে নির্মূল করাই আমাদের লক্ষ্য। সেইসঙ্গে সচেতনতার প্রচারও চালানো হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার কালীগঞ্জ, পলাশীপাড়া, করিমপুর এলাকা মাদক ব্যবসার হাবে পরিণত হয়েছে। হেরোইন তৈরি করা থেকে শুরু করে তা ভিন রাজ্যে পাচার করা, সবটাই করে একাধিক ছোটছোট সিন্ডিকেট। বলা যায়, ওই এলাকায় ঘরে ঘরে পরিবার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এই ব্যবসা ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। দামি হেরোইন বাইরের রাজ্যে পাচার করে মোটা টাকা কামায় কারবারিরা। পাশাপাশি নিম্নমানের হেরোইন পুরিয়া আকারেও বিক্রি করা হয় স্থানীয় স্তরে। মূলত অল্পবয়সি যুবক, শ্রমিক শ্রেণির মানুষদের মধ্যে এর চাহিদা ব্যাপক। যা পুলিসের কাছেও উদ্বেগজনক।এই শ্রেণির মহলে চাহিদা ক্রমশ বাড়তে থাকায় লাগাতার মাদকের সরবরাহ অব্যাহত থাকে।
কালীগঞ্জ পলাশীপাড়া সংলগ্ন এলাকায় হেরোইন ব্যবসার সিন্ডিকেট ভাঙতে পুলিসের তরফ থেকে বিগত দেড় বছরে লাগাতার অভিযান চালানো হয়েছে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, হেরোইন কারবার বন্ধ করতে ২৭টি এনডিপিএস মামলায় ধরা পড়েছে ৫২ জন হিরোইনের ব্যবসায়ী ও পাচারকারী। বাজেয়াপ্ত হওয়া হেরোইন ও তার কাঁচামালের পরিমাণ ৪৮২ কেজি ৫৭২ গ্রাম। যার বাজারমূল্য কয়েকশো কোটি টাকা। ৯ কেজি ৮১৯ গ্রাম হেরোইন সহ ৩৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। ৩৩৩ গ্রাম মরফিন সহ ৪ জন, ১৪ কেজি ২২২ গ্রাম ওপিয়াম সহ ৬ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। বাজেয়াপ্ত হওয়া ১০১ কেজি ৩৮ গ্রাম আলপ্রাজোলাম সহ গ্রেপ্তার হয়েছে ৩ জন। ২০০ কেজি অ্যাসেটিক অ্যানহাইড্রাইড, ১৫০ কেজি কোডাইন মিক্সচার, ৬ কেজি ৮৪ গ্রাম পোস্তর আঠাও বাজেয়াপ্ত হয়েছে বিগত দেড় বছরে।
কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার অতিরিক্ত পুলিস সুপার(গ্রামীণ) উত্তম ঘোষ বলেন, বিগত দশ দিনেই আমরা বিভিন্ন মাদক মামলায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পলাশীপাড়া থানা এলাকা থেকে ৩ কেজি ১৩৩ গ্রাম হেরোইন বাজেয়াপ্ত হয়েছিল।