• চোরা শিকারিদের দাপটে বিপন্ন হতে বসেছে ঝাড়গ্রামের জঙ্গলের চন্দনা টিয়া
    বর্তমান | ২১ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: ঝাড়গ্রামের জঙ্গল ও পাহাড়ে দেখা পাওয়া যায় বিরল প্রজাতির চন্দনা টিয়ার। সুন্দর রং, মধুর ডাকে জঙ্গল মুখরিত হয়ে থাকে। কিন্তু চোরা শিকারিদের দাপটে ঝাড়গ্রাম থেকে বিপন্ন হতে বসেছে এই পাখি। গোপন পথে কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে তা পাচার করা হচ্ছে। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ প্রেমীরা।

    ঝাড়গ্রামের ডিএফও ওমর ইমাম বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। স্থানীয় রেঞ্জের অফিসাররা যেন বিষয়টির দিকে নজর দেন তার নির্দেশ দেওয়া হবে। বন বিভাগ এক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ নেবে। 

    ঝাড়গ্রামের সৌন্দর্য সবুজ অরণ্য, পাহাড় ও বনের পশুপাখিরা। জেলায় বিরল প্রজাতির নানা পশু ও পাখি ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কখনও খাবার জন্য কখনও পাচারের জন্য শিকার করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে অন্যতম কথা বলা চন্দনা টিয়া। জামবনী ও বিনপুর-২ ব্লকের বাঁশপাহাড়ী, শিমুলপাল পাহাড়ের জঙ্গলে সবচেয়ে বেশি চন্দনা পাখির দেখা মেলে। পড়ন্ত বিকেলে চন্দনা পাখির ঝাঁকের সম্মলিত কলরবে পাহাড়ের পাদদেশ মুখরিত হয়ে ওঠে। দিনে দল বেঁধে কখনও আবার জোড়ায় উড়ে বেড়াতে দেখা যায়। ডিসেম্বরের পর থেকেই এদের বেশি সংখ্যায় দেখা পাওয়া যায়। বড় গাছ বা কাঠ ঠোকরার পরিত্যক্ত কোটরে চন্দনা টিয়া ডিম পাড়ে। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস প্রজননের সময়। তিন থেকে চারটে ডিম পাড়ে। একমাসের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। পাঁচ-ছ’মাসের মধ্যে বাচ্চা ওড়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। পুরুষ পাখির গলার পিছনে ও ঘাড়ের পাশে গোলাপি বলয় থাকে। স্ত্রী পাখির তা থাকে না। উভয়ের গায়ের রং ঘাস-সবুজ। ঠোঁটের রং লাল। জমির ধান, গম, ভুট্টা, গাছের কচিপাতা, ফুলের রস খেতে ভালোবাসে। আট থেকে ন’মাস বয়সের পর চন্দনা টিয়া কথা বলতে পারে। যার জেরে এই পাখির চাহিদা প্রচুর। গাছের কোটর থেকে ডিম ফোটা বাচ্চা চোরা শিকারি বের করে আনে। একটু বড় হলেই চোরা পথে কলকাতার বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। জেলার বনের পশুপাখি সুরক্ষা আন্দোলনের এক কর্মী বলেন, বেলপাহাড়ী এলাকার শিমুলপাল, চিরাকুটি, ওদোলচুয়া সিংডোবা, জামতলাগড়ের জঙ্গল পাহাড়ী এলাকা থেকে চন্দনা টিয়ার বাচ্চা সংগ্ৰহ করে কলকাতার পাচার করা হচ্ছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে এসব পাখি ধরা, পোষা ও মারা আইনগতভাবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু জেলার বন বিভাগের কোনও পদক্ষেপ নেই। বিরল প্রজাতির এই পাখি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। 

    ওদোলচুয়া এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ট্রেনে রেল পুলিসের কড়াকড়ি আছে। বেলপাহাড়ী, পরিহাটি, দহিজুড়ি, লালগড়ের পথে, আর একটি শিলদা, বাঁকুড়ার পথে চন্দনা টিয়া পাচার হয়ে হচ্ছে। প্রজননের সময় চলে এসেছে। জঙ্গলে চোরা শিকারিদের আনাগোনাও বেড়ে গিয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)