মেয়াদ শেষে ইস্যু হচ্ছে না ডাকঘরের এটিএম কার্ড, চরম দুর্ভোগ
বর্তমান | ২১ মে ২০২৫
বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: এটিএম কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। নতুন কার্ডের জন্য আবেদনও করেছেন লক্ষ লক্ষ গ্রাহক। কিন্তু মাসের পর মাস কেটে গেলেও কার্ডের দেখা নেই। কবে গ্রাহক এটিএম কার্ড পাবেন, কেউ জানে না। ডাকঘরের এটিএম কার্ড পরিষেবার এহেন বেহাল দশায় গ্রাহক-দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
পোস্ট অফিসগুলিতে এটিএম পরিষেবা শুরু হওয়ার সময় দেশজুড়ে এক হাজার এটিএম মেশিন বসানো হয়। পশ্চিমবঙ্গে বসে প্রায় ৬০টি এটিএম মেশিন। ডাকঘরে সেভিংস অ্যাকাউন্ট রয়েছে, এমন গ্রাহকের সংখ্যা যেখানে কয়েক কোটি, সেই জায়গায় এই ক’টি এটিএম প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই নয়। কিন্তু দপ্তরের কর্তারা জানান, এটিএমের সংখ্যা বৃদ্ধিতে রাজি নয় ডাক বিভাগ। বরং তারা তাদের এটিএম কার্ড অন্যান্য ব্যাঙ্কের এটিএমেও ব্যবহারযোগ্য করতে চায়। সেই মতো এমন এটিএম কার্ড ইস্যু করা হয়, যেগুলি অন্যান্য সরকারি, বেসরকারি ব্যাঙ্ক এবং ব্যাঙ্ক নয়, এমন আর্থিক সংস্থার এটিএমেও সমান কার্যকর। সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির তুলনায় সার্ভিস চার্জ কম হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যাপক জনপ্রিয় হয় ডাকঘরের এটিএম। কিন্তু মেয়াদ ফুরনোর পর নতুন কার্ড না আসায় ফাঁপরে পড়েছেন ব্যবহারকারীরা।
কেন গ্রাহক নতুন কার্ড পাচ্ছেন না? দপ্তর সূত্রে খবর, অন্যান্য ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে প্লাস্টিক কার্ডগুলির মেয়াদ সাধারণত ১০ বছর থাকে। সেই জায়গায় ডাকঘরের এটিএম কার্ডের মেয়াদ পাঁচ বছর। সেই অনুযায়ী যাঁরা ডাকঘরের এটিএম পরিষেবা শুরুর দিকে কার্ড নিয়েছিলেন, তাঁদের সিংহভাগের কার্ডের মেয়াদ চলতি বছরের ৩১ মার্চ শেষ হয়ে গিয়েছে। এবার গ্রাহক যখন নতুন কার্ডের জন্য আবেদন করছেন, তা আর মিলছে না। দপ্তরের কর্তারা জানাচ্ছেন, ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ মেয়াদ শেষ হবে, এমন কিছু এটিএম কার্ড বিভিন্ন ডাকঘরে পড়ে রয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে গ্রাহককে সেই কার্ডই দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাও তো মাত্র এক বছরের জন্য। তারপর আর সেগুলি ব্যবহার করা যাবে না। কেন এই অবস্থা? দপ্তরের কর্তাদের একাংশের কথায়, যে ভেন্ডর বা সংস্থাকে ওই কার্ডের বরাত দেওয়া হয়, তাদের সঙ্গে আর্থিক বিষয়ে কোনও সমস্যা হওয়ায় কার্ডের ডেলিভারি হচ্ছে না। নতুন করে কার্ড ছাপিয়ে আসতে এখনও অনেকটা সময় লেগে যাবে। কতদিনে সেই কার্ড মিলবে, তার কোনও যুৎসই জবাব নেই কারও কাছে। গোটা দেশেই এই সঙ্কট চলছে। প্রসঙ্গত, ডাক বিভাগের যে এটিএম মেশিনগুলি এতদিন চালু ছিল, বিগত কয়েক মাসে সেগুলিও পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। এক্ষেত্রেও দপ্তরের গলার কাঁটা হয়ে রয়েছে সেই ভেন্ডর সমস্যা।
এমনিতেই ডাকঘরগুলিতে পরিষেবার হাঁড়ির হাল। সাধারণ গ্রাহকরা তিতিবিরক্ত। লিঙ্ক চলে যাওয়া থেকে শুরু করে নানা সমস্যায় জর্জরিত পোস্ট অফিসগুলি। এর মধ্যে এটিএম কার্ড নিয়ে উদ্ভূত সমস্যা যেন ‘গোদের উপর বিষফোঁড়া’! গ্রাহকদের বক্তব্য, এটিএম পরিষেবা তো বিনামূল্যে দেওয়া হয় না। তাহলে পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে দপ্তর আরও বেশি পেশাদার হবে না কেন? কী কারণে কার্ড মিলছে না, তা গ্রাহকদের জানার কথা নয়। সেটি দপ্তরের নিজস্ব বিষয়। তার জন্য গ্রাহক কেন সমস্যায় পড়বেন? প্রশ্ন ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।