• লস্কর ঘাঁটিতে ট্রেনিং জ্যোতির, পহেলগাঁওয়ের নকশা পাচার পাকিস্তানে, হামলায় যোগ?
    বর্তমান | ২১ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শুধুই ভারতের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিতে নজরদারি? নাকি পাক গুপ্তচর সংস্থার হয়ে আরও বড় দায়িত্ব পালন করছিল ট্রাভেল ভ্লগার জ্যোতিরানি মালহোত্রা? আইএসআই যে তাকে ‘অ্যাসেট’ (পূর্ণ সময়ের গুপ্তচর) বানানোর পরিকল্পনা করেছিল, সেটা তদন্তকারীদের কাছে স্পষ্ট আগেই। কিন্তু এবার জানা যাচ্ছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য— পাকিস্তানের মাটিতেই জ্যোতির প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল পাক গুপ্তচর সংস্থা। সেটাও লাহোরে কাছে মুরিদকে শহরে। সেই কারণেই পাকিস্তান সফরে গিয়েছিলেন ওই ট্রাভেল ভ্লগার। পহেলগাঁও হামলার কিছুদিন আগেই মুরিদকেতে শেষ হয় সেই প্রশিক্ষণ পর্ব। কিন্তু কেন মুরিদকে? এই শহরই হল জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তোইবার মূল ঘাঁটি। সেখানেই রয়েছে তাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মার্কাজ-ই-তোইবা। এই মার্কাজেই জ্যোতির ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। জেরায় ধৃত ভ্লগার নিজেই জানিয়েছে, মুরিদকেতে সে টানা ১৪ দিন ছিল। তখন তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ‘অপারেশন সিন্দুর’ চলাকালীন এই মুরিদকে শহরে অবস্থিত জঙ্গিঘাঁটিকে টার্গেট করেছিল ভারতীয় সেনা। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় লস্করের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। মৃত্যু হয় বহু জঙ্গির। কোনওমতে প্রাণে বেঁচে যায় লস্করের প্রতিষ্ঠাতা তথা হাফিজ সইদ। 

    তদন্তে উঠে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। হরিয়ানা পুলিসের অনুমান, পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর হামলার নীল নকশা পাকিস্তানে পাচারের দায়িত্বে ছিল জ্যোতি। জঙ্গি হামলার আগে সে বেশ কয়েকবার কাশ্মীরে গিয়েছিল। এমনকী বৈসরণ ভ্যালির যেখানে পর্যটকদের নৃশংসভাবে খুন করেছিল জঙ্গিরা, সেখানেও যায় জ্যোতি। ভ্লগিংয়ের নাম করে বিভিন্ন দিক থেকে ওই এলাকার ভিডিও তোলে। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সময়, প্রায় চারঘণ্টা সেখানে ছিল সে। শুধু পহেলগাঁওয়ের নকশা পাচার, নাকি হামলাতেও জ্যোতির সরাসরি যোগ ছিল, তা খতিয়ে দেখছে এনআইএ। জানা যাচ্ছে, অপারেশন সিন্দুর চলাকালীনও পাকিস্তান হাই কমিশনের বহিষ্কৃত আধিকারিক দানিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল জ্যোতি। ভারত কীভাবে প্রত্যাঘাতের পরিকল্পনা করছে, সেই সংক্রান্ত বহু তথ্য সীমান্তের ওপারে পাচার হয়েছে তার হাত ধরে। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, পাক-আফগান সীমান্তেও এক সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ফোন করেছিল সে।

    জ্যোতির সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করেছেন তদন্তকারীরা। জানা গিয়েছে, দানিশ ছাড়াও পাক সেনার এক মেজর জেনারেলের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রেখে চলত ধৃত ভ্লগার। বার্তা চালাচালির জন্য ব্যবহার হত সাংকেতিক ভাষা। নজরদারি এড়াতে একাধিক এনক্রিপটেড অ্যাপ ব্যবহার করত জ্যোতি। মুছে ফেলা হত চ্যাট। একাধিক সন্দেহভাজন ব্যক্তির নম্বর ভুয়ো নামে ফোনে সেভ করেও রেখেছিল। সূত্রের খবর, পাক সেনার ওই আধিকারিক জ্যোতিকে নির্দেশ দিয়েছিল, ভারতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন, সৌধ বা তীর্থস্থানে গিয়ে ভিডিও করতে হবে। ওই স্থানগুলিতে নিরাপত্তার কী ব্যবস্থা রয়েছে, নজরদারি কতটা কড়া বা ঢিলেঢালা সেই সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয়গুলি যাতে ভিডিওতে দেখা যায়, তার নির্দেশও দেওয়া হয়। কিছু জায়গার ভিডিও জ্যোতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করেনি। এরকম বেশ কিছু নতুন ও পুরনো ভিডিও উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা। 

    হরিয়ানা পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, তথ্য পাচারের জন্য অন্য ট্রাভেল ভ্লগারদেরও কাজে লাগাতে শুরু করেছিল জ্যোতি। তার চাহিদামতো তথ্য ও ছবি শেয়ার করলে ই-ওয়ালেটে মিলত মোটা টাকা। ঘুরপথে সেই টাকা জোগানের দায়িত্বে ছিল আইএসআই। সম্প্রতি মহিলাদের নিয়ে একটি স্পেশাল টিম গঠনের ভারও জ্যোতিকে দিয়েছিল আইএসআই।
  • Link to this news (বর্তমান)