১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ট্রেন লেট, চরম ভোগান্তি , সাঁতরাগাছিতে সিগন্যাল বিভ্রাট, স্তব্ধ দক্ষিণ-পূর্ব শাখা
বর্তমান | ২১ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: সপরিবারে ঘাটশিলা বেড়াতে যাচ্ছেন বাগবাজারের শ্যামল সেন। সকাল সাড়ে ছ’টার ইস্পাত এক্সপ্রেস ধরার কথা ছিল তাঁদের। সেই মতো হাওড়া স্টেশনে পৌঁছেও গিয়েছিলেন। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তাঁরা জানতে পারলেন, রাত সাড়ে ৮টায় ছাড়বে ইস্পাত! ১৪ ঘণ্টা লেট! মাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য বেঙ্গালুরু যাচ্ছেন অনিল মঙ্গেশ। হাওড়া থেকে সোমবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটের দুরন্ত এক্সপ্রেস ধরার কথা ছিল তাঁদের। ঘণ্টাদেড়েক আগেই মাকে নিয়ে চলে এসেছিলেন স্টেশনে। এসে জানতে পারলেন, সন্ধ্যার আগে দুরন্ত ছাড়বে না।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সাঁতরাগাছি ইয়ার্ডে সিগন্যালিং সিস্টেমে কিছু বিভ্রাট ধরা পড়েছিল সোমবার সকালেই। অল্পবিস্তর ব্যাহত হয় পরিষেবাও। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে সেই সমস্যা চরমে ওঠে। সাঁতরাগাছির সিগন্যালিং ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়ে। একের পর এক লোকাল ও দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল করতে হয়। বহু ট্রেন ছাড়তে অস্বাভাবিক দেরি করে। হাওড়ায় ঢুকতে না পেরে টিকিয়াপাড়া থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে বহু ট্রেন। দলে দলে যাত্রীকে লটবহর নিয়ে রেললাইন ধরে হাঁটতে দেখা যায়। তীব্র গরমের মধ্যে হাজার হাজার যাত্রী হাওড়া স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হন।
রেল সূত্রে খবর, রবিবার হাওড়া-খড়্গপুর শাখার সাঁতরাগাছিতে ইন্টারলকিংয়ের কাজ হয়েছিল। সোমবার থেকে সিগন্যাল বিগড়োতে শুরু করে। মঙ্গলবার তা এতটাই চরম আকার নেয় যে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাওড়া থেকে চারটি এক্সপ্রেস ও ১৪টি লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। ১৭টি দূরপাল্লার ট্রেনের সময়সূচি বদল করতে হয়। হাওড়া-পুরুলিয়া এক্সপ্রেস বিকেল সাড়ে ৪টের পরিবর্তে রাত ৯টায় ছাড়বে বলে ঘোষণা করা হয়। হাওড়া-এসএমভিবি হামসফর এক্সপ্রেস দুপুর সাড়ে ১২টার পরিবর্তে রাত ৯টায়, তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস সকাল পৌনে ৭টার পরিবর্তে রাত সোয়া ন’টায়, হাওড়া-মুম্বই গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস বেলা ১টা ৪০ মিনিটের পরিবর্তে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ছাড়বে বলে জানানো হয়। এদিন ভোর থেকে হাওড়া স্টেশনের নিউ কমপ্লেক্সে যাত্রীদের থিকথিকে ভিড় চোখে পড়ে। বেলা বাড়তেই প্ল্যাটফর্ম ভরে যায় কাগজের ঠোঙা, চায়ের কাপ, খাবারের উচ্ছিষ্টে। কারণ, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কোনও ট্রেনই যাত্রা শুরু করতে পারেনি। চিকিৎসার জন্য যাঁরা দক্ষিণ ভারত যাচ্ছিলেন, তাঁদের অনেকেই গরম আর দীর্ঘ অপেক্ষায় অসুস্থ বোধ করেন। প্ল্যাটফর্মের একাধিক ফ্যান কাজ না করায় গলদঘর্ম হতে হয় যাত্রীদের। এর মধ্যে রেলের তরফে কোনও স্পষ্ট বার্তা না থাকায় যাত্রীদের ক্ষোভ আরও বাড়তে থাকে। যাত্রী সহায়তা কেন্দ্রের বাইরে সারাক্ষণ ভিড় লেগেছিল। দক্ষিণ পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ওমপ্রকাশ চরণ বলেন, ‘ইন্টারলকিংয়ের কাজ শেষ হওয়ার পর সিগন্যাল ব্যবস্থায় কিছু যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়েছে। তাই স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম গতিতে চালাতে হচ্ছে ট্রেন। এদিন দুপুরের পর থেকে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি আয়ত্তে এসেছে। বুধবার থেকে আর কোনও সমস্যা হবে না।’