• তাপপ্রবাহের দাপটে নতুন সংকটের সম্মুুখীন প্রসূতি থেকে সদ্যোজাতরা
    এই সময় | ২১ মে ২০২৫
  • এই সময়: ২০২০ থেকে ২০২৪ — চার বছরেই সংখ্যাটা বেড়ে গিয়েছে সারা পৃথিবীতে। জলবায়ু পরিবর্তন ও আবহাওয়া নিয়ে কর্মরত সংস্থা ‘ক্লাইমেট সেন্ট্রাল’–এর সমীক্ষা বলছে, পৃথিবীর ৯৪৭টি শহরের পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে, সেটা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটাই উপরে থাকার মূল্য দিতে হচ্ছে গর্ভস্থ শিশু এবং সদ্যোজাতদের। এখানেই শেষ নয়, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ২০২০–তে অর্থাৎ কোভিড অতিমারী আসার বছরে যারা জন্মেছে, তারা সারা জীবনে যে পরিমাণ তাপপ্রবাহ দেখতে চলেছে, এর আগে কোনও প্রজন্মই সেই পরিমাণ তাপপ্রবাহ দেখেনি।

    দিনের গড় তাপমাত্রা যদি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য শারীরিক ভাবে ক্ষতিকর জায়গায় পৌঁছে যায়, তা হলে বিজ্ঞানের পরিভাষায় তাকে ‘হিট রিস্ক ডে’ বলে চিহ্নিত করা হয়। ‘ক্লাইমেট সেন্ট্রাল’–এর বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ২০২০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের গড় তাপমাত্রা এবং তাপপ্রবাহ ‘হিট রিস্ক ডে’–র সংখ্যা বছরে ৩০ দিন বাড়িয়ে দিয়েছে।

    অতিরিক্ত তাপপ্রবাহে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, সাহারা মরুভূমি–সংলগ্ন আফ্রিকা, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ এবং দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার। প্রসূতিদের স্বাস্থ্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষের অসুস্থতা সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্রুস ডেকার এই বিষয়ে বলেন, ‘বিশেষ কোনও জীবাণুঘটিত অসুখ নয়, প্রবণতা বাড়ছে দ্রুত বদলে যাওয়া জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারার জন্য অসুস্থতারও।’

    শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে কর্মরত আন্তর্জাতিক জনকল্যাণকর সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’–এর বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, ২০২০–তে যত শিশু জন্মেছে, তাদের প্রায় ৫২ শতাংশকেই আবহাওয়ার চরম নির্মমতার শিকার হতে হবে। যদি গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমার মধ্যে আটকে রাখা সম্ভব হয়, তা হলেও ২০২০–তে জন্মানো শিশুরা যত তাপপ্রবাহ দেখবে, সেই পরিমাণ তাপপ্রবাহ অন্য কোনও প্রজন্মকেই দেখতে হয়নি।

    সংস্থার আশঙ্কা, ১৮৫০ সালের আগে অর্থাৎ শিল্প বিপ্লবের আগে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা যে জায়গায় ছিল, ২১০০ সাল নাগাদ পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা তার চেয়ে ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে ২০২০–এর জাতকদের ৯২ শতাংশই তাদের জীবদ্দশায় ভয়াবহ তাপমাত্রার অভিজ্ঞতা অর্জন করবে।

    এর পাশাপাশি পরিবেশবিদরা জানাচ্ছেন, তাপমাত্রা সহনশীলতার মাত্রা ছাড়ানোর ‘পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া’ হলো বিপুল সংখ্যক মানুষের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে বাধ্য হওয়া। বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা, সেই দিন খুব দূরে নয় যখন দেখা যাবে, একটা বিরাট অঞ্চলের মধ্যেই কোনও কোনও জায়গা তুলনামূলক ভাবে স্বস্তিদায়ক বলে প্রচুর মানুষের বাসস্থান হয়ে পড়েছে এবং বিস্তীর্ণ এলাকা জনশূন্য চরমভাবাপন্ন জলবায়ুর জন্য।

  • Link to this news (এই সময়)