• আলোচনায় বসতে চেয়ে কর্মহারাদের চিঠি ব্রাত্যকে
    এই সময় | ২১ মে ২০২৫
  • এই সময়: পথের আন্দোলন ছেড়ে এ বার কি আলোচনার পথে চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষক–শিক্ষিকারা?

    সুপ্রিম–রায়ের প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার কী ভাবে তাঁদের স্থায়ী ভাবে চাকরির সুযোগ করে দিতে পারে, তা নিয়ে আলোচনায় বসতে চেয়ে মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে চিঠি দিল ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’। সেই চিঠির প্রতিলিপি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ইমেলে পাঠানো হয়েছে। এরপরে তা হলে সরকার কী করবে? এ দিন সন্ধেয় ব্রাত্য বলেন, ‘চিঠি হাতে পাই, তারপরে দেখব।’ আন্দোলনকারীরা বলছেন, মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হলে তারপরেই রাস্তার আন্দোলন তুলে নেওয়ার ব্যাপারে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন।

    চিঠিতে মূল‍ত তিনটি বিষয়ে আলোচনার কথা বলেছেন চাকরিহারারা। প্রথমত, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে রাজ্য যে রিভিউ পিটিশন করেছে, তাতে কোন কোন পয়েন্ট উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সুপ্রিম কোর্ট যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে বলেছিল, তার স্টেটাস কী। তৃতীয়ত, যদি কোনও ভাবে পুনর্বিবেচনার আবেদন (রিভিউ পিটিশন) খারিজ হয়ে যায়, তা হলে এই চাকরিহারাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আর কী উপায় থাকতে পারে।

    চিঠিতে তাঁরা লিখেছেন— ‘সুপ্রিম কোর্টের দুর্ভাগ্যজনক রায়ের ফলে ২০১৬ সালের প্যানেলভুক্ত প্রায় ১৯ হাজার নির্দোষ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছে। ১৩ দিন ধরে আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে বিকাশ ভবনের সামনে দিনরাত বসে আছি। ১২ এপ্রিল থেকে কোনও সরকারি কর্মকর্তা নতুন নিয়োগ পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি ও শীর্ষ আদালতে রিভিউ পিটিশন সংক্রান্ত আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের উদ্বেগ নিয়ে আলোচনার জন্য দেখাই করেননি।

    আন্দোলনরত শিক্ষকদের মধ্যে তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা ও আশঙ্কা এমনই হতাশার পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ১৫ মে ঘেরাও–বিক্ষোভ আন্দোলনের চেহারা নিয়েছিল। এই আন্দোলন ছিল অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সঙ্গে সম্পর্কিত ভয় ও উদ্বেগের প্রকাশ।’ চিঠিতে চাকরিহারাদের সংযোজন, ‘সুপ্রিম কোর্ট রিভিউ পিটিশনের আবেদন বাতিল করলে এই ভয় ও উদ্বেগ আরও গভীর হবে। তাই আমরা ২০ মে থেকে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনার জন্য আপনার সুবিধা অনুযায়ী, যে কোনও সময়ে আমাদের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধ করছি।’

    কিন্তু সল্টলেকে বিকাশ ভবনের সামনে ১৩ দিন ধরে অবস্থান–বিক্ষোভের পরে এখন আলোচনায় বসতে চেয়ে কেন চিঠি দেওয়া হচ্ছে?

    চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষক মেহবুব মণ্ডল ও শিক্ষিকা সঙ্গীতা সাহার কথায়, ‘মুখ্যমন্ত্রী সোমবার বলেছেন, উনি আন্দোলনের বিপক্ষে নন। রাজ্য সরকারকে আন্দোলনকারীদের বিশ্বাস করা উচিত ছিল। বিকাশ ভবনে গত বৃহস্পতিবার দিনভর তুলকালামের পরে শিক্ষামন্ত্রী সোমবারই প্রথম সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, আন্দোলনকারীদের কোনও বক্তব্য আছে কি না, লিখিত কিছু দিতে চান কি না, তা নাকি শিক্ষা দপ্তর আগেই জানতে চেয়েছিল। আমরা নাকি যোগাযোগই করিনি। তাই উনি জানতেনই না, আমরা কী নিয়ে আন্দোলন করছি!’

    মেহবুবদের দাবি, ‘শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্য ঠিক নয়। স্কুলশিক্ষা দপ্তর ও শিক্ষামন্ত্রীর অফিশিয়াল ইমেল আইডি নিষ্ক্রিয়। আর পুলিশ তো ১৫ তারিখ থেকে আমাদের বিকাশ ভবনের ভিতরে ঢুকতেই দিচ্ছে না। আমরা প্রথম থেকেই ইমেল করে আমাদের ছ’দফা দাবি স্কুলশিক্ষা দপ্তর, স্কুলশিক্ষা সচিব এবং কমিশনারকে জানিয়েছি।’

    সঙ্গীতার কথায়, ‘শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়ে ১৫ মে আমরা পুলিশের মাধ্যমে চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু বিকাশ ভবন ঘেরাওয়ের দিন পুলিশকর্তারা আমাদের জানান, শিক্ষামন্ত্রী নয়, শিক্ষাসচিব আমাদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি। তখন আন্দোলনকারীরা সমবেত ভাবে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবে শিক্ষামন্ত্রী সোমবার বলেছেন, সংবাদমাধ্যম থেকে তিনি জেনেছেন, ওঁরা পরীক্ষা দিতে চান না। অথচ সুপ্রিম কোর্ট পরীক্ষা দিতে বলেছে। তিনি এ–ও বলেছেন, আমরা আদালত অবমাননা করব কী ভাবে? বিকাশ ভবন এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনের আধিকারিকদের কাজ করতে দেওয়া হোক।’

    আর এক চাকরিহারা শিক্ষক ধৃতীশ মণ্ডল বলেন, ‘আমরা এতদিন পরে নতুন করে কী ভাবে পরীক্ষায় বসব? পরীক্ষার না বসার বিষয়ে আমরা অনড়। সেই সঙ্গে সসম্মানে চাকরিতে না–ফেরা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’ চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষাকর্মীরাও বলছেন, ‘সরকার আমাদের চাকরি দিয়েছে। সরকারের দুর্নীতি ফলেই আমাদের চাকরি খারিজ করেছে আদালত। আমরা কী ভাবে স্থায়ী ভাবে চাকরি ফেরত পাব, সেটা সরকার আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান সূত্র বের করুক।’

    বিকাশ ভবনের সামনে ‘যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’র সমর্থনে এ দিন অবস্থান কর্মসূচিতে সামিল হয় ‘অল বেঙ্গল ব্লাইন্ড টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন’। দৃষ্টিহীন শিক্ষক-শিক্ষিকা রবীন্দ্রনাথ সাহা, রাহুল দেবরায় এবং সাহেব সাহারা চাকরিহারা ‘যোগ্য’ দৃষ্টিহীন শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের জীবন সংগ্রাম এবং ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত জীবনের জটিলতা তুলে ধরেন। প্রতিবাদ হয় কবিতা, রং–তুলির মাধ্যমেও।

  • Link to this news (এই সময়)