• নিম্নমানের চা আমদানি রুখতে সীমান্তে টি-টেস্টিং ল্যাব, মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে খুশি বণিকসভা
    প্রতিদিন | ২১ মে ২০২৫
  • বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: অভিযোগ অনেক দিনের। সমস্যা সমাধানে হস্তক্ষেপের দাবি নিয়ে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কয়েক দফায় দরবার করেছেন উত্তরের চা বণিকসভার কর্তারা। কিন্তু লাভ হয়নি। সোমবার শিলিগুড়ির দীনবন্ধু মঞ্চে উত্তরবঙ্গের শিল্পপতিদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী নেপালের নিম্নমানের চা আমদানি রুখতে দ্রুত সীমান্তে টি-টেস্টিং ল্যাবরেটরি তৈরির উদ্যোগের কথা জানাতে খুশির হাওয়া চা বণিকসভা মহলে। ২৮ মে দোলা সেনের নেতৃত্বে দার্জিলিংয়ে আসছেন মিনিস্ট্রি অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বিষয়ক সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা। তাঁদের সামনেও ফের বিনা শুল্কে নেপালের নিম্নমানের চা আমদানির সমস্যা তুলে ধরতে চায় বণিকসভাগুলি। মুখ্যমন্ত্রী শ্রমমন্ত্রীকে দিল্লিতে গিয়ে চা পর্ষদের দপ্তর ঘেরাওয়ের যে নির্দেশ দিয়েছেন সেটাতেও আশার আলো দেখছেন চা বণিকসভার কর্তারা।

    কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন নেপালের নিম্নমানের চা আমদানি নিয়ে প্রতিবাদ করে যাচ্ছি। কেন্দ্রীয় সরকারের বানিজ্য মন্ত্রীর কাছেও দরবার করেছি। লাভ হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী পদক্ষেপ করায় অনেকটাই আশার আলো দেখছি।” একমত কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান সতীশ মিত্রুকার। ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফোরাম অব স্মল টি গ্রোয়ার্স’-এর চেয়ারম্যান রজত কার্জি অভিযোগ করেন, নেপালের নিম্নমানের চায়ের জন্য দার্জিলিং চায়ের পাশাপাশি ডুয়ার্সের অর্থডক্স চায়ের বদনাম হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার দেখেও না দেখার ভান করছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সঠিক পদক্ষেপ করেছেন। সীমান্তে টি-টেস্টিং ল্যাবরেটরি তৈরি হলেই সব ঠান্ডা হবে। চা বণিকসভাগুলো সূত্রে জানা গিয়েছে, নেপাল সরকার ভারতীয় চা রফতানির ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ হারে শুল্ক লাগু করেছে।

    অথচ নেপাল থেকে ভারতে শুল্ক ছাড়াই বছরে ১১ মিলিয়ন কেজি সিটিসি এবং ৫ মিলিয়ন কেজি অর্থডক্স চা ভারতে ঢুকছে। নেপালের সস্তা এবং গুণমানে খারাপ চা শিলিগুড়ির বাজারে ঢোকার পর এক শ্রেণির ব্যবসায়ী দার্জিলিং চা হিসেবেও বিক্রি করছে। এর ফলে একদিকে দার্জিলিং চায়ের গৌরব ক্ষুন্ন হচ্ছে। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের ২১০টি বটলিফ কারখানায় উৎপাদিত সিটিসি এবং অর্থডক্স চায়ের বাজারে সংকট ঘনীয়েছে। ৯০ টাকা কেজি দামেও চা বিক্রি হচ্ছে না। লোকসানের কারণে অনেক কারখানা ইতিমধ্যে চা উৎপাদন কমিয়েছে। উত্তরের প্রায় ৫০ হাজার ছোট চা বাগানের ১ হাজার ২৫০ মিলিয়ন কেজি কাচা চা পাতা থেকে বটলিফ কারখানাগুলোতে বছরে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়ে থাকে। নেপালের চা বাজারের ভারসাম্য নষ্ট করায় বটলিফ কারখানাগুলো উৎপাদন কমাতে কাচা চা পাতার চাহিদায় টান পড়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন ক্ষুদ্র চা চাষিরা।

    অভিযোগ, তিন বছর আগে লোকসভার স্ট্যান্ডিং কমিটি বাণিজ্য মন্ত্রকের কাছে নেপালের চা ভারতে অবাধ প্রবেশ বন্ধ করতে শুল্ক ধার্য ও  ভারতের খাদ্য সুরক্ষা বিধি কঠোর প্রয়োগের সুপারিশ করলেও লাভ হয়নি। পরিনতিতে উত্তরের চা শিল্প পথে বসতে চলেছে। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, “আমরা সমস্যার কথা তুলে ধরার পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উপলব্ধি করেছেন। তাই নেপাল সীমান্তে দ্রুত টি-টেস্টিং ল্যাবরেটরি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। ২৮ মে দোলা সেনের নেতৃত্বে মিনিস্ট্রি অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বিষয়ক সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রতিনিধি দল দার্জিলিংয়ে আসছেন। তাদের সামনে আমরা ফের নেপালের চায়ে শুল্ক ধার্য ও  ভারতের খাদ্য সুরক্ষা বিধি কঠোর প্রয়োগের দাবি জানানো হবে।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)