মুখ্যমন্ত্রীর সফরের মধ্যেই উঠল রাজ্য ভাগের প্রসঙ্গ
আনন্দবাজার | ২১ মে ২০২৫
মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফরের মধ্যেই উত্তরবঙ্গে অনুন্নয়নের অভিযোগে ফের রাজ্য ভাগের প্রসঙ্গ সামনে আনলেন বিজেপি বিধায়ক। বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক তথা শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের অনেক মানুষ উত্তরবঙ্গের অবহেলা নিয়ে বলতে গিয়ে আলাদা রাজ্য চান। এ কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই।’’ যদিও এ দিনই শিলিগুড়ি লাগোয়া জলপাইগুড়ির ফুলবাড়ির মাঠে সরকারি সভা থেকে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে শুধু উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর নয়, রাজ্যের সব দফতর টাকা খরচ করছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “উত্তরবঙ্গ আগে কী ছিল? মানুষের কান্না। এক দিকে হাতি, এক দিকে গন্ডার! আর কোনও উন্নয়ন ছিল না! এক বারও চোখ খুলে দেখেছেন?” তাঁর মন্তব্য, “অনেকেই অনেক কথা বলে, কিন্তু বাঘে খেলেও কেউ দেখতে আসে না!” প্রসঙ্গত, আজ, বুধবার বিকেলে কলকাতা ফেরার কথা মুখ্যমন্ত্রীর।
উত্তরবঙ্গের তিন জেলার (দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার) জন্য এ দিন প্রায় সাড়ে ৪৫০ কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন-শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তরবঙ্গের কোন জেলায় কী-কী প্রকল্পের কাজ হয়েছে তা জানান। সেই সঙ্গে বরাদ্দ আটকে রাখায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে দুষেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এক লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রের থেকে পাই। জিএসটি-র টাকাও ঠিক মতো পাই না।”
গত বিধানসভা ভোটের আগে, আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ জন বার্লা প্রথম উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য করার দাবি তোলেন। পরে, জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায়, বিধায়ক আনন্দময় বর্মণ, শিখা চট্টোপাধ্যায়-সহ বিজেপির আরও কিছু নেতাকে কখনও উত্তরবঙ্গের জন্য আলাদা রাজ্য, কখনও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবিতে সরব হতে দেখা গিয়েছিল। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্যভাগ চান না বলে স্পষ্ট করলে, তাঁরা থামেন। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি রাজ্য ভাগের বিপক্ষে।
আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং সমতলের মতো এলাকায় গত বিধানসভা ভোটে তৃণমূল পিছিয়ে পড়েছিল। তবে লোকসভা ভোটে কোচবিহার আসন দখল করেছে তারা। জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি, আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাটে উপনির্বাচনে জিতেছে। স্থানীয় রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মতে, ডুয়ার্স-তরাইয়ের বড় অংশে থাকা চা বলয়ে একটু-একটু করে জমি শক্ত করছে রাজ্যের শাসক দল। তা আঁচ করেই সম্ভবত বিধানসভা ভোটের আগে নতুন করে রাজ্য ভাগের প্রসঙ্গ তোলা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “চা বাগানের শ্রমিকেরা মনে রাখবেন, আমরা আপনাদের পাশে ছিলাম-আছি-থাকব। অনেকে অনেক কথা বলে। ‘এত দেব, অত দেব’। দাওনি কেন এত দিন?’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার পাল্টা বলেন, ‘‘উনি (মুখ্যমন্ত্রী) মা উড়ালপুলের জন্য কত বরাদ্দ করেছেন, আর উত্তরবঙ্গ উন্নয়নের জন্য কত বরাদ্দ করেছেন তা দেখলেই বোঝা যাবে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে কী করছেন!’’ বিধায়ক শঙ্কর বলেছেন, ‘‘বিজেপি রাজ্য ভাগের পক্ষে নয়। কিন্তু উত্তরের অনেক মানুষই উত্তরবঙ্গ আলাদা হতে পারলেই ভাল বলে মনে করেন।’’
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, ‘‘কেউ বাংলা ভাগ চায় না। কেবল বিজেপি চায়। মানুষ তা দেখছেন।’’ তবে সম্প্রতি তৃণমূলে যোগ দেওয়া বার্লাকে রাজ্য ভাগের প্রসঙ্গে ফোনে প্রশ্ন করা হলে উত্তর দেননি। জবাব মেলেনি মোবাইল-বার্তার।