গত এপ্রিলে মুর্শিদাবাদে হিংসার ঘটনায় স্থানীয় পুলিশ পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় ও গরহাজির ছিল বলে আদালতে রিপোর্ট জমা দিল হাইকোর্ট নিযুক্ত তিন সদস্যের তথ্য-অনুসন্ধান কমিটি। সূত্রের খবর, কমিটি নির্দিষ্ট করে জানিয়েছে, ওই ঘটনায় স্থানীয় কাউন্সিলর জড়িত।
কমিটির রিপোর্টে আরও গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়েছে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে। বলা হয়েছে, হিংসার পরে বেতবোনা গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা প্রাণ বাঁচাতে মালদায় পালিয়ে যান নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসনের তরফ থেকে তাঁদের জোর করে বেতবোনা গ্রামে ফেরানো হয়।
কমিটিতে রয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রেজিস্ট্রার (আইন) যোগীন্দর সিং, পশ্চিমবঙ্গ লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি-র সদস্য সচিব সথ্য অর্ণব ঘোষাল এবং পশ্চিমবঙ্গ জুডিশিয়াল সার্ভিসের রেজিস্ট্রার সৌগত চক্রবর্তী।
ধুলিয়ান পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মেহেবুব আলম হিংসার ঘটনায় জড়িত। ১১ এপ্রিল, শুক্রবার ধুলিয়ানে মূল হামলার দিন স্থানীয় বিধায়ক আমিরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে ছিলেন। তাঁর সামনেই ভাঙচুর, হামলা হয়। তারপরের দিন, ১২ এপ্রিল, শনিবারও হামলা হয় ধুলিয়ানে। হামলায় বেতবোনা গ্রামে ১১৩টি বাড়ির প্রভূত ক্ষতি হয়।
গ্রামের লোকজন কমিটির সদস্যদের জানান, শুক্রবার বিকেল ৪টের সময়ে এবং শনিবারও একই সময়ে তাঁরা পুলিশ ডেকেছিলেন। কিন্তু থানার পুলিশ টেলিফোন তোলেনি। দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়ে, বাড়িতে আগুন লাগিয়ে চলে গিয়েছিল। পরে একজন ফিরে আসে দেখে কোন কোন বাড়িতে তখনও আগুন ধরানো হয়নি। পরে দুষ্কৃতীরা সেই সব বাড়িতেও আগুন ধরায়।
হামলাকারীরা জলের সংযোগ কেটে দিয়েছিল, যাতে জ্বলতে থাকা বাড়ির আগুন নেভাতে জল পাওয়া না যায়। এমনকী, বাড়িতে থাকা সব জামাকাপড়ও কেরোসিন তেল ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তার ফলে মহিলার গায়ে দেওয়ার মতো জামাকাপড় ছিল না।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ধুলিয়ানে মুদির দোকান, হার্ডঅয়্যারের দোকান, ইলেকট্রিকের দোকান ও জামাকাপড়ের দোকান ভেঙেচুরে তছনছ করা হয়। ১১ এপ্রিল বেলা আড়াইটে নাগাদ ধুলিয়ান শহরে মূল হামলা হয়। ১২ নম্বর ওয়ার্ডের একটি শপিং মল হামলা চালিয়ে সর্বস্ব লুট করা হয়।
রিপোর্ট যে শিউরে ওঠার মতো ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো এই যে, হরগোবিন্দ দাস ও তচাঁর ছেলে চন্দন দাসকে তাঁদের বাড়ির দরজা ভেঙে টেনে হিঁচড়ে বার করা হয়। তার পরে তাঁদের পিছনে কুড়ুল দিয়ে আঘাত করা হয়। তাঁদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত এক দুষ্কৃতী ঘটনাস্থলে ছিল।
কমিটির সদস্যরা রিপোর্টে জানিয়েছেন, এলাকার বাসিন্দারা চাইছেন, সেখানে বিএসএফের ক্যাম্প তৈরি হোক। একইসঙ্গে তাঁরা কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী এলাকায় রাখার পক্ষে। কারণ রাজ্যে পুলিশে তাঁদের ভরসা নেই বলেও জানিয়েছে কমিটি। দুষ্কৃতীরা গরু বাছুর পর্যন্ত লুট করেছে। গ্রামবাসীদের আশঙ্কা, বিএসএফের ক্যাম্প উঠে গেলেই ফের হামলা হবে।