বুদ্ধদেব বেরা, ঝাড়গ্রাম
199 দুয়ারে কড়া নাড়ছে বিধানসভা নির্বাচন। তবে দিনক্ষণ ঘোষণা হতে ঢের দেরি আছে। তার আগেই তৃণমূল-বিজেপির বাগযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল ঝাড়গ্রামে। কী নিয়ে বাগযুদ্ধ?
ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার দুপুরে। মোটরবাইকে ছ'জন যুবক বিনপুরের ভিটলি গ্রামে পৌঁছন। নিজেদের 'কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি' পরিচয় দিয়ে তাঁরা ওই এলাকার কয়েকটি বাড়িতে সমীক্ষার কাজ শুরু করেন। জানতে চান, তাঁদের ধর্ম-জাতি-পেশা। গ্রামে পানীয় জল, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট, শিক্ষা-সহ কী কী সমস্যা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমল নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমল ভালো। তৃণমূলের বীরবাহা হাঁসদা, বিজেপির প্রণত টুডু-সহ বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে তাঁরা প্রশ্ন করেন, '২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে কাকে বিধায়ক হিসেবে চাইছেন?'
এতক্ষণ সব মসৃণ ভাবেই চলছিল। কিন্তু তাল কাটে শেষ প্রশ্নে। গ্রামের লোকজন এ বার পাল্টা জানতে চান, 'আপনারা কারা?' তাঁরা কখনও নিজেদের 'কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি', কখনও সংবাদমাধ্যমের কর্মী বলে দাবি করেন। সন্দেহ বাড়তে থাকায় এ বার তাঁদের পরিচয়পত্র চেয়ে বসেন গ্রামবাসীরা। তখনই উঠে আসে আসল তথ্য। ছয় যুবককে আটক করে খবর দেওয়া হয় বিনপুর থানায়। গ্রামবাসীদের চাপে পড়ে ওই আগন্তুকেরা জানান, হরিয়ানার একটি সংস্থার হয়ে তাঁরা বিধানসভা নির্বাচনের আগেই ভোট সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন। যে তথ্য হরিয়ানার সংস্থাটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সংবাদ সংস্থাকে বিক্রি করবে। তথ্য সংগ্রহের বিনিময়ে অর্থও পাবেন ওই যুবকেরাও।
মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদার গ্রামের বাড়ি বিনপুরে। মুহূর্তেই খবর পৌঁছয় তাঁর কাছেও। তিনি ঝাড়গ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, কেন্দ্র থেকে কোনও দল সমীক্ষা করতে আসেনি। তারপরেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই ছ'জনকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ছ'জনের মধ্যে হেমন্ত হেমব্রম, পতিতপাবন সিং, অভিজিৎ মণ্ডলের বাড়ি বাঁকুড়ায়। মলয় মণ্ডল ও পাপাই মণ্ডলের বাড়ি লালগড়ে। আর দেবদত্ত চার বেলিয়াবেড়ার বাসিন্দা। তাঁরা ঝাড়গ্রাম শহরের একটি মেসবাড়িতে থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন। তাঁদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে, জিজ্ঞাসাবাদের পরে ছেড়ে দেয় বিনপুর থানার পুলিশ।
তবে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। তৃণমূলের দাবি, ওই হয় যুবক বিজেপির অখিল ভারত বিদ্যার্থী পরিষদের সদস্য। দেবদত্ত চার আরএসএসের সক্রিয় সদস্য। বিনপুর অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি হীরেন হাঁসদার অভিযোগ, 'কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে সমীক্ষা করতে আসা প্রত্যেকেই বিজেপির চর। এলাকার শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করতেই ওঁরা তথ্য সংগ্রহ করছেন।'
বীরবাহা হাঁসদা বলেন, 'এলাকার মানুষ শান্তিতে আছেন। এটা বিজেপির সহ্য হচ্ছে না। সমীক্ষার নামে এলাকায় অশান্তি ছড়ানোর পরিকল্পনা করছে বিজেপি।' মন্ত্রীর অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলার সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুর মন্তব্য, 'তৃণমূল হারের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। আর সেই কারণেই সমীক্ষায় ভয় পাচ্ছে। যে কোনও সংস্থা, দেশের যে কোনও প্রান্তে গিয়েই রাজনৈতিক বা সামাজিক সমীক্ষা করতে পারে। সেটা তার গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু তা যেন দেশবিরোধী না হয়, সে দিকে নজর রাখতে হবে। তৃণমূল মিথ্যাচার করছে।'
সমীক্ষা করতে আসা দেবদত্ত চারের দাবি, 'একটা সময়ে আমি আরএসএস এর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এ কথ্য সত্যি। কিন্তু গত চার বছর ধরে আরএসএস- এর সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। নিরপেক্ষতা বজায় রেখেই সমীক্ষা করতে এসেছিলাম।' আর এক যুবক হেমন্ত হেমব্রমের কথায়, 'ঝাড়গ্রামের মেসবাড়িতে থেকে পড়াশোনা করছি। বাড়ি পিছু ২৫ টাকার বিনিময়ে সমীক্ষা করার সুযোগ পেয়ে গত ১৫ মে থেকে কাজ শুরু করি। কিন্তু এটা করতে এসে যে এত বড় সমস্যায় পড়ব, বুঝতে পারিনি।'
হরিয়ানার যে সংস্থার হয়ে ওই যুবকেরা সমীক্ষা করতে এসেছিলেন, সেই সংস্থার ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার এরিয়া ম্যানেজার পিন্টু কুমার। কলকাতা থেকে তিনি বলেন, 'নির্বাচনের আগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সম্ভাব্য ফল প্রকাশ করে। আমাদের সমীক্ষায় উঠে আসা নানা মত সংবাদ সংস্থাগুলোর হাতে তুলে দিই। আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করি না। নিরপেক্ষ ভাবে মানুষের মতামত সংগ্রহ করি।'