• বিপজ্জনক রাস্তায় কিছুতেই গড়াল না গাড়ির চাকা, পথেই সন্তানের জন্ম দিলেন মেদিনীপুরের সোনালি
    এই সময় | ২২ মে ২০২৫
  • পাকা রাস্তা, তবু মনে হবে কোনও আলপথ। সামান্য বৃষ্টি হলেই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে সেই রাস্তা। বর্তমানে এই রাস্তার অবস্থা এতটাই ভয়ঙ্কর, প্রসূতি নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছতেই পারল না পরিবার। ঝুঁকি নিয়ে গাড়ির ভিতরেই প্রসব করালেন আশাকর্মী। মেদিনীপুরের নারায়ণগড় ব্লকের পাকুড়সেনি সংলগ্ন এলাকার ঘটনা। এই ঘটনা শুধু উদ্বেগেরই নয়, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে গ্রামীণ পথের ভয়াল ছবি। তবে ওই আশাকর্মীর প্রশংসা করেছেন প্রসূতির পরিবারের লোকজন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, ‘আশা দিদিরা আমাদের স্বাস্থ্যদপ্তরের গর্ব। দায়িত্ব নিয়ে তিনি যে ভাবে প্রসব করিয়ে মা ও শিশুকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন, তা প্রশংসার যোগ্য।’

    স্থানীয় বাসিন্দা সুব্রত সিং ও সোনালি সিংয়ের প্রথম সন্তানের জন্ম হবে। বুধবার ভোর তখন ৪টে। সোনালির শরীরে অস্বস্তি বুঝে স্থানীয় আশাকর্মী মানসী পাত্রকে ফোন করেন সুব্রত। এ দিকে অত ভোরে মাতৃযান বা ১০২ অ্যাম্বুল্যান্সে ফোন করলে দেরি হতে পারে, এমনই আশঙ্কা করেন আশা দিদি। তাই বুদ্ধি করে তিনি তাঁরই এক আত্মীয় বিশ্বজিৎ রাউতকে ফোন করে মারুতি গাড়ি নিয়ে আসতে বলেন।

    আধ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্বজিৎ গাড়ি নিয়ে পৌঁছন পাকুড়সেনিতে। ততক্ষণে প্রসব যন্ত্রণা বেড়েছে সোনালির। স্বামী, আশা কর্মী ও পরিবারের দুই সদস্য গাড়িতে উঠে পড়েন। কিন্তু বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছুটা এগোতেই কাদামাটিতে বসে যায় গাড়ির চাকা। গাড়ি নড়ছেই না। এ দিকে সোনালির পরিস্থিতি ক্রমেই গুরুতর হচ্ছে।

    উপায় না দেখে গাড়িতেই প্রসব করানোর সিদ্ধান্ত নেন আশাকর্মী মানসী। মানসী জানান, প্রসব করানোর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ছিল না তাঁর। তবে, নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই এই চরম বিপদের মুহূর্তে সফল হন মানসী। গাড়ির মধ্যেই ফুটফুটে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন সোনালি।

    এরপরই মা ও সদ্যোজাতকে বেলদা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মানসী। ততক্ষণে কোদাল দিয়ে কিছুটা কাদা পরিষ্কার করতে সক্ষম হন গাড়ির চালক। আপাতত মা ও নবজাতক সুস্থ আছেন বলেই জানান আশা কর্মী। সন্তানের মুখ দেখে পথের যন্ত্রণা ভুলেছেন সুব্রতও। তবে গাড়ির চালক বিশ্বজিৎ জানান, খুবই সাংঘাতিক অবস্থা হয়েছিল রাস্তায়। আরেকটু হলে পাশের জমিতে উল্টে যেতে পারত গাড়ি।

    জানা গিয়েছে, গত এপ্রিলে বোরো ধান কাটা শুরু হওয়ার পর থেকেই ট্রাক্টর এবং ধান কাটার মেশিন যন্ত্রের চাকায় উঠে আসা কাদা এভাবেই গ্রামীণ রাস্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজ্য সড়কে জমতে শুরু করেছে। গত ১৬ এপ্রিল এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয় এই সময় অনলাইনেও। সেই সময় পুলিশের তরফে সতর্কও করা হয় নারায়ণগড়, বেলদা, পিংলা, ডেবরা, সবং, কেশিয়াড়ি, দাঁতন-সহ বিভিন্ন থানা এলাকার বাসিন্দাদের। কিন্তু, তাতে যে খুব একটা কাজ হয়নি, বুধবার ভোরের ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

    নারায়ণগড়ের বিডিও কৌশিক প্রামাণিক এই সময় অনলাইনকে বলেন, ‘শুধু পুলিশ নয়, গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফেও প্রচার করা হয়েছে। আমরা গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যদের ট্রাক্টর ও হারভেস্টার মালিকদের নামের তালিকা জমা করতেও বলেছি। যে সব রাস্তা এখনও পরিষ্কার করা হয়নি, সেখানে আমরা ট্রাক্টর এবং হারভেস্টার মালিকদের জরিমানা করতে চলেছি। প্রয়োজনে তাঁদের গাড়িগুলি বন্ধ করে দেওয়া হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)