ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: পহেলগাঁও কাণ্ডের পর দেশের স্বার্থে প্রকৃত দায়িত্বশীল বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পাক সন্ত্রাসের কথা বিশ্বকে জানাতে বিদেশ সফরে যাচ্ছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে সংকীর্ণ, কুৎসা-অপপ্রচারের ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতি করে বাংলাকে অশান্ত করতে চাইছে বলে বিজেপিকে নিশানা করল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। হাইকোর্টের তৈরি কমিটি যেখানে মুর্শিদাবাদের ঘটনা নিয়ে মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দিয়েছে, সেখানে বিজেপি কিছু তথ্য সামনে রেখে যা দাবি করেছে তাকেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্র বলে তোপ দেগেছে তৃণমূল। তাদের অভিযোগ, বিজেপি শান্ত বাংলাকে আবার অশান্ত করতে চাইছে।
বুধবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন থেকে বিজেপিকে নিশানা করেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। নির্দিষ্ট করে পরপর কটি প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তাঁর সাফ কথা, “মুর্শিদাবাদের ঘটনা অবাঞ্ছিত, কখনওই হওয়া উচিত নয়। কিন্তু বিজেপি সেই ঘটনা নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার করছে।” অমিত মালব্য-সহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের এই রিপোর্ট সামনে রেখে দাবি, বেছে বেছে হিন্দুদের নিশানা করা হয়েছে মুর্শিদাবাদে। কুণালের প্রশ্ন, “এই রিপোর্ট নিরপেক্ষ কিনা, সম্পূর্ণ কিনা, রিপোর্টের বাস্তব প্রতিফলিত হয়েছে কিনা, বহিরাগত তত্ত্ব খতিয়ে দেখা হয়েছে কিনা, এখনও তার পর্যালোচনা বাকি। কিন্তু তার আগেই বিজেপি বিকৃত তথ্যের দাবিতে বাংলাকে অসম্মান করছে, আমরা তার বিরোধিতা করছি।”
পরপর নির্দিষ্ট প্রশ্ন সামনে রেখেছেন এই তৃণমূল নেতা। বলেছেন, ১. ঘটনার পর থেকে ব্যাপক ধরপাকড় হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০০ জনের বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে। যারা এর সঙ্গে যুক্ত, যারা হামলা করেছে তেমন ৩০০-র বেশি অভিযুক্ত গ্রেপ্তার। কোনও অপরাধীকে রেয়াত করা হবে না। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে দোষীদের ধরার চেষ্টা করছে পুলিশ প্রশাসন। এর মধ্যে শোনা যাচ্ছে, কোথাও জমি-বাড়ি নিয়েও লড়াই হয়েছে। তার সঙ্গে এই ঘটনার কোনও যোগ নেই।২. ঘটনার পর যাঁরা মারা গিয়েছেন, আহত হয়েছেন, যাঁদের দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী সবরকমভাবে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। এই অবাঞ্ছিত ঘটনায় যাঁদের শরীরগত, জীবনগত, সম্পত্তিগত ক্ষতি হয়েছে সরকার, পুলিশ, প্রশাসন তাঁদের পাশে। ৩. ঘটনা ঘটার পর একাধিক প্রেক্ষিত পরিষ্কার। কুণালের কথায়, “একটা বৃহত্তর চক্রান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে হামলাবাজেরা এসেছিল কিনা, অন্য জায়গা থেকে বহিরাগতরা এসেছিল কিনা তার ইঙ্গিত মিলেছে। তার উপর দাঁড়িয়ে তদন্ত চলছে। একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পিত চিত্রনাট্য তৈরির জন্য এই চক্রান্ত ঘটানো হয়েছে।” ৪. এই ঘটনা যখন ঘটল তখন উসকানিমূলক পোস্ট, অন্য জায়গার ছবি ব্যবহার করে সেগুলো মুর্শিদাবাদের বলে চালানো হচ্ছে। পুলিশ অপরাধী ধরে এলাকায় শুধু শান্তিই ফেরায়নি, জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বিকৃত প্রচার থামানোর কাজও দায়িত্বের সঙ্গে করে গিয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত। সেখানে বিজেপি বিকৃত তথ্য নিয়ে নামছে।
এখানেই প্রশ্ন তুলে কুণাল বিঁধেছেন বিজেপিকে। তাঁর প্রশ্ন, “পহেলগাঁওয়ের জঙ্গিরা কই? তারা কি ধরা পড়েছে? তৃণমূল কংগ্রেস সমালোচনা না করে দায়িত্বশীল বিরোধীর ভূমিকা নিয়েছে। এই সময় বিজেপি নেতারা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তাদের কাছে দেশ বড় কথা নয়, সংকীর্ণ কুৎসামূলক রাজনীতি, বাংলার প্রতি প্রতিহিংসাই হল তাদের অগ্রাধিকার। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করছি।”