১৫ বছর ধরে কেন্দ্রের কাছ থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণের অর্থ মিলছে না: মমতা
বর্তমান | ২২ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে গঙ্গা ভাঙন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রের কাছ থেকে কোনও অর্থ পাচ্ছে না বাংলা। বুধবার মিনি সচিবালয় উত্তরকন্যায় প্রশাসনিক বৈঠকে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে তিনি ভারত-ভুটান নদী কমিশনে বাংলার প্রতিনিধি রাখার দাবি তুলেছেন। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের কাছে চিঠি পাঠাবেন বলে জানান। এদিকে, অতিবৃষ্টি, ঝড়, বন্যা, নদী ভাঙন, ধস সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলায় আট জেলার প্রশাসনকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি দক্ষিণবঙ্গের আদলে মিনি সচিবালয়ে ২৪ ঘণ্টার জন্য কন্ট্রোল রুম চালুর নির্দেশ দিয়েছেন।
সরকারি নিয়ম অনুসারে জুন মাস থেকেই বর্ষার মরশুমের সূচনা। এবার জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করবে বলে আবহাওয়া দপ্তর ইঙ্গিত দিয়েছে। এই অবস্থায় প্রশাসনিক বৈঠকের আলোচ্য বিষয়গুলির মধ্যে অন্যতম ছিল বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা। সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গঙ্গা ভাঙন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের হাতে রয়েছে। দীর্ঘ ১৪-১৫ বছর ধরে এক্ষেত্রে কোনও আর্থিক সহায়তা কেন্দ্র থেকে মিলছে না। অসম বন্যা ত্রাণের টাকা পেলেও আমরা পাচ্ছি না। যাই হোক বেশি কথা বললে তিক্ততা বাড়বে। আমি আর তিক্ততা বাড়াতে চাই না। তবে ভারত-ভুটান নদী কমিশনে বাংলার কোনও প্রতিনিধি নেই। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চিঠি লিখব।
উল্লেখ্য, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নদীর গতিবিধির উপর নজর রাখতেই সংশ্লিষ্ট কমিশন গঠন হয়েছিল। কোচবিহার থেকে মালদহ পর্যন্ত প্রতিটি জেলাই নদী বেষ্টিত। গঙ্গা, ফুলহার, কশী, আত্রেয়ী, তিস্তা, তোর্সা, মহানন্দা, জলঢাকা, রায়ডাক, মানসাই, কালচিনি প্রভৃতি সহ ছোটবড় মিলিয়ে অসংখ্য নদী রয়েছে। সেগুলির কোনওটি সিকিম, কোনওটি ভুটান, আবার কোনওটির উৎপত্তিস্থল নেপাল। পাহাড়ে বৃষ্টি হলে সংশ্লিষ্ট নদীগুলি ফুলেফেঁপে ওঠে। এদিকে, মালদহের গঙ্গা ও ফুলহার নদী উচ্চ অববাহিকা বিহার ও উত্তরপ্রদেশ। সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির বৃষ্টিতে মালদহে ভয়ঙ্কর রূপ নেয় গঙ্গা ও ফুলহার। উমপুন সহ বিভিন্ন ধরনের সাইক্লোন ও মাল বাজারের হড়পাবানের প্রসঙ্গ টেনে সভায় মমতা বলেন, সিকিম ও ভুটানে বৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভুটান ও নেপাল এবং প্রতিবেশী রাজ্য সিকিমের জলে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা ভাসে। তাই এখন থেকেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। এনডিআরএফ, এসডিআরএফ, সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়ার সহ গোটা রাজ্য প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। তবে ইতিমধ্যেই নদীর বাঁধ ও পাড় মেরামত করা হয়েছে।
একইসঙ্গে দুর্যোগ মোকাবিলা করায় দক্ষিণবঙ্গের মতো কন্ট্রোল রুম উত্তরকন্যায় চালুর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, বিপর্যয় ব্যবস্থাপনায় দক্ষিণবঙ্গের মতো উত্তরকন্যায় সারা বছর ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম চালু করা হবে। এর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো করতে হবে। যাতে সেখান থেকে প্রতিটি জেলার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। একইভাবে প্রতিটি ব্লকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে প্রতিটি জেলা।