নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: সিকিমে একের পর এক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হলেও বাংলা বঞ্চিত কেন? বুধবার রাজ্যের মিনি সচিবালয় উত্তরকন্যায় প্রশাসনিক বৈঠকে এই প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করেন। এই আবর্তে প্রতিবেশী রাজ্য সিকিমকেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, আমরা বন্ধুত্বের হাত বাড়াব, আর ওরা ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলবে তা হয় না। সীমাবদ্ধতা মেনে চলা উচিত।
পাহাড়ি রাজ্য সিকিমে একাধিক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি নিয়ে প্রশ্ন দীর্ঘদিনের। দেড় বছর আগে সিকিমে হ্রদ বিপর্যয়ের পর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভূ-বিদদের একাংশ সরবও হয়েছিলেন। তাঁদের ধারণা, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির ড্যাম থেকে অপরিকল্পিতভাবে জল ছাড়ায় পাহাড়ে ধস ও তিস্তা নদীর ভাঙন বেড়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে এদিন উত্তরকন্যার প্রশাসনিক বৈঠকে সেই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়েই প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, আমরা আসার আগেই ওই রাজ্যে যেখানে সেখানে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। সিকিম ছোট রাজ্য। একটি এমপি। সেখানে ১৪টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। সেই তুলনায় আমাদের রাজ্য অনেক বড়। আমরা দু’টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির চেষ্টা করেছিলাম। অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কিন্তু সিকিমে এতগুলি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির অনুমোদন এনএইচপিসি দিল কেন? সেগুলির জল যাওয়ার জায়গা নেই। সেই জল বাংলায় এসে পড়ছে। তাতে বাংলার কিছু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সিকিমের প্রতি বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার প্রীতি নিয়েও কটাক্ষ করেন মমতা। তিনি বলেন, দার্জিলিং পাহাড় কেন্দ্রের সহায়তা পায় না। কিন্তু সিকিম কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে ৯০ শতাংশ ভরতুকি পায়। সেখানে ইনকাম ট্যাক্স ফ্রি। এই সুযোগে সেখানে গিয়ে রিয়াল এস্টেটের ব্যবসায় হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ, নোটবন্দি সবজানি। আমরাও কিছু খবর রাখি। আর কিছু বললাম না।
একইসঙ্গে সিকিমের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। পুরনো ইতিহাস তুলে বলেন, প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারি বাজপাইয়ের সরকারকে আমরা বাইরে থেকে সমর্থন করেছিলাম। সেই সময় কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলে সিকিমকে ‘এইট সিস্টার’ রাজ্যের সুবিধা আমরাই পাইয়ে দিয়েছিলাম। সিকিমকে ভালোবাসি। কালিম্পং ও শিলিগুড়ি হয়ে ওদের যাতায়াত করতে হয়। আমাদের এখান থেকে প্রচুর পর্যটক ওই রাজ্যে যায়। ওদের সঙ্গে আমরা বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। কিন্তু ওরা আমাদের ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে। বাংলার বিষয়ে ইন্টারফেয়ার করার চেষ্টা করছে। এটা মানা যায় না। সীমাবদ্ধতা মেনে চলা উচিত। লক্ষ্মণ রেখা অতিক্রম করা ঠিক নয়। আমরাও নিঃশ্বাস ছাড়তে পারি।