শিল্পাঞ্চলে বন্ধ টাউন সার্ভিস বাস, গুনতে হচ্ছে বেশি ভাড়া
বর্তমান | ২২ মে ২০২৫
সুমন তেওয়ারি, আসানসোল: মহিশীলা-বার্নপুর ভায়া এবি গড়াই রোড, একটি জনপ্রিয় মিনিবাস রুট ছিল আসানসোলে। টাউন সার্ভিস ‘এ’ নামে এই রুটে ১৫টি বাস সারাদিনে একাধিকবার যাতায়াত করত। অন্য রুটটি ছিল মহিশীলা-আরসিআই ভায়া হটন রোড। টাউন সার্ভিস ‘বি’ রুটটিতে কোনওদিন যাত্রীর অভাব হয়নি। এছাড়াও আসানসোল-সেনর্যালে বা মহিশীলা-কল্যাণপুর, শহরের মধ্যে চলা প্রতিটি মিনিবাসের রুট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সুযোগ বুঝে যাত্রীদের ইচ্ছেমতো পকেট কাটছে টোটোচালকদের একাংশ। ৭টাকায় যাতায়াত করা মানুষজন বিপাকে পড়ে ৫০টাকা দিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন। মাথায় হাত সাধারণ মানুষের।
মহিশীলার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী সুপ্রিয় ঠাকুর। তিনি বলেন, অনেকদিন আগে অবসর নিয়েছি। পেনশন বেশি পাই না। ওষুধপত্র সহ সব জিনিসের যেভাবে দাম বেড়েছে তাতে সংসার চালাতে নাভিশ্বাস উঠছে। শহরের ভিতরে বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় যাতায়াতে বাড়তি খরচ হচ্ছে। একাধিক টোটো পাল্টে কল্যাণপুরে মেয়ের কাছে যাই। অনেক বেশি ভাড়া পড়ে। অন্য যাত্রী না থাকলে টোটো বুক করতে হয়। ৫০টাকার নীচে কোনও বুকিং হয় না। তাহলেই বুঝুন যাতায়াতের খরচ কত বেড়েছে। একই কথা বলছিলেন আসানসোলের ইসমাইলের বাসিন্দা সুনন্দা রায়ও। তিনি বলেন, শহর থেকে টাউন সার্ভিস বাস উঠে গিয়ে অত্যন্ত খারাপ হয়েছে। টোটো, অটো অনেক সময় ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে।
শুধু আসানসোল নয়, রানিগঞ্জ এলাকারও বহু মিনিবাস রুট উঠে গিয়েছে। বল্লভপুর-রানিগঞ্জ সম্পূর্ণ বন্ধ। আসানসোল-তিরাট, রানিগঞ্জ-জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ-পাণ্ডবেশ্বর রুটে বহু মিনিবাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শুধু কী মিনিবাস, টাউন সার্ভিসে বড় বাসও চলত। তাদেরও পরিষেবা লাটে উঠে গিয়েছে। বার্নপুর-আসানসোল রুটে বাস চলত ৩৬টি। এখন চলে মাত্র ১২টি। সেনর্যালে-আসানসোল, আসানসোল-গৌরাণ্ডি রুট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চিত্তরঞ্জন-আসানসোল রুটে ১৬টির জায়গায় চলছে মাত্র তিনটি বাস। যার জেরে যাতায়াতের খরচ কয়েকগুণ বেড়েছে সাধারণ মানুষের। যা নিয়ে সংসারে বাড়ছে টানাটানি।
কেন এমন দশা? বাস মালিকদের দাবি, টোটোর দাপটে বেশিরভাগ রুটই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রথমে বাড়ির কাছ থেকে যাত্রী চাপাত। বাসের সমান ভাড়ায় নিজ গন্তব্যে লোকে পৌঁছে দিয়েছিল টোটোচালকরা। সেইসময়ে বাস ছেড়ে অনেকে টোটোয় যাতায়াতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। এবার বাস যাত্রীর অভাবে উঠে যেতেই একছত্র রাজত্ব আসায় কিছু টোটোচালকের মাথা ঘুরে গিয়েছে। বাড়তি মুনাফা লোটার জন্য ইচ্ছেমতো ভাড়া চাইছেন। সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। কারণ, তাঁদের হাঁটুর জোর নেই। তাই টোটোচালকরা মর্জিমতো চলছেন। শহরবাসীর দাবি, এখন কার পরিস্থিতিতে সব রুটে টাউন সার্ভিস বাস নতুন করে চালু করা অসম্ভব। সেইসব রুটে টোটো চালকদের জন্য নির্দিষ্ট রুট ও টোটো স্ট্যান্ড করে দেওয়া হোক। যেখানে টোটো ভাড়া সাইনবোর্ডে উল্লেখ থাকবে।
আসানসোল বাস অ্যাসোসিয়েশনের সহকারী সম্পাদক রাজেন মুখোপাধ্যায় বলেন, টোটোর দাপটে আমাদের বাসগুলি যাত্রীশূন্য হয়ে গিয়েছিল। তাই বাধ্য হয়ে রুটে গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে হয়েছে। আসানসোলের মেয়র বিধান উপাধ্যায় বলেন, আমরা টাউন সার্ভিস বাস চালানোর উদ্যোগ নিয়েছি। (শেষ)