নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া ও সংবাদদাতা, রঘুনাথপুর: দেরিতে ট্রেন চলাচল ও প্রস্তাবিত প্রকল্প রূপায়ণে অনীহার কারণে রেলের অনুষ্ঠান বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাঁকুড়ার সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী। নবনির্মিত জয়চণ্ডীপাহাড় স্টেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে না যাওয়ার বিষয়টি তিনি বুধবার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন। ‘অমৃত ভারত’ প্রকল্পে আদ্রা ডিভিশনে ১৬টি স্টেশনের আধুনিকীকরণের কাজ হচ্ছে। সেই তালিকায় রয়েছে জয়চণ্ডী স্টেশন। আজ, বৃহস্পতিবার ওই স্টেশনের উদ্বোধন হবে। অনুষ্ঠানে বাঁকুড়ার সাংসদকে রেলের তরফে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমন্ত্রণের চিঠিতে খোদ রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সই রয়েছে। এদিন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের শীর্ষস্তরের এক আধিকারিক অরূপবাবুকে ফোন করলে জানিয়ে দেন, তিনি ওই অনুষ্ঠানে যাবেন না। অরূপবাবু বলেন, হাওড়া-বাঁকুড়া-পুরুলিয়া শাখায় দেরিতে ট্রেন চলাটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকালের ট্রেন বিকেলে চলছে। বারবার বলা সত্ত্বেও ছাতনা-মুকুটমণিপুর রেল প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে না। বাঁকুড়া-মেজিয়া রেল প্রকল্প নিয়েও রেলের তরফে কোনও উচ্চবাচ্য করা হচ্ছে না। রেলের বৈঠকে আমি আধিকারিকদের ওইসব বিষয় নিয়ে বারবার বলেছি। রেলমন্ত্রীকেও চিঠি লিখেছি। কিন্তু, কাজের কাজ কিছু হয়নি। এই পরিস্থিতিতে জনপ্রতিনিধি হিসেবে রেলের অনুষ্ঠান মঞ্চ আলো করে বসে থাকার কোনও মানে হয় না। জয়চণ্ডী পাহাড় স্টেশনের অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা আমি রেলের আধিকারিকদের জানিয়ে দিয়েছি। সংসদে আমার দলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বিষয়টি জানিয়েছি। দল আমার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে। আদ্রা ডিভিশনের ডিআরএম সুমিত নারুলা বলেন, সাঁতরাগাছিতে বড় প্রজেক্টের কাজ চলছে। তার জন্য ট্রেন চলাচলে বিঘ্নিত হচ্ছে। যাত্রীদের যাতে অসুবিধা না হয়, তারজন্য আমরা সব সময় সজাগ থাকি। অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখে সমাধানের জন্য সদা তৎপর রয়েছি।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, জয়চণ্ডী স্টেশনের আধুনিকীকরণের জন্য ১১.৪৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। রঘুনাথপুরের ঐতিহ্যবাহী পর্যটন কেন্দ্র জয়চণ্ডী পাহাড়ের গুরুত্বকে সামনে রেখে অমৃত ভারত প্রকল্পের তালিকায় এই স্টেশনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রেল স্টেশন যাওয়ার মূল প্রবেশ পথে একটি গেট বসানো হয়েছে। স্টেশনের ভিতর ও বাইরে রং করা হয়েছে। স্টেশনজুড়ে আলো লাগানো হয়েছে। প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে মেঝেতে বিভিন্ন গ্রানাইট পাথর লাগানো হয়েছে। চিত্রশিল্পীদের আঁকা নানা চিত্রে স্টেশন চত্বর ভরে উঠেছে। প্ল্যাটফর্মে অতিরিক্ত শেড দেওয়া হয়েছে। প্রথম শ্রেণির বিশ্রামকক্ষকে আধুনিকীকরণ করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। পাশাপাশি দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্রামকক্ষের আমূল সংস্কার করা হয়েছে। প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে লিফট বসানো হয়েছে। ট্রেন ইনফরমেশন বোর্ড ও নতুন কোচ ইন্ডিকেশন বোর্ড (সিআইবি) লাগানো হয়েছে। ৩ নম্বর প্ল্যাট ফর্মের পাশে ২০০৫ বর্গমিটার এলাকা অতিরিক্ত পার্কিংয়ের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। রয়েছে শীতল পানীয় জলের ব্যবস্থা।
বিশেষভাবে সক্ষম যাত্রীদের জন্য স্টেশনের প্রবেশপথে তৈরি হয়েছে ঢালু র্যাম্প। তাদের জন্য স্বল্প উচ্চতার ইউটিএস টিকিট কাউন্টার, পানীয় জল সংগ্রহেরর জায়গা ও বিকল্প শৌচাগার থাকছে। দৃষ্টিহীনদের জন্য স্টেশনের প্রবেশপথ, টিকিট কাউন্টার, প্ল্যাটফর্মের সামনে অংশ ও স্টেশনের বিভিন্ন এলাকায় স্পর্শ নির্দেশিকা পথ করা হয়েছে। শিশুদের দুগ্ধ পান করার জন্য মায়েদের আলাদা জায়গা তৈরি করা হয়েছে।