• দেড় বছরে ৯০টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু প্রায় পঞ্চাশ, ডাবল লেনের দাবি
    বর্তমান | ২২ মে ২০২৫
  • অগ্নিভ ভৌমিক, কৃষ্ণনগর: মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে কৃষ্ণনগর-করিমপুর রাজ্য সড়ক! সঙ্কীর্ণ এক-লেনের রাজ্য সড়কে গাড়ির বেপরোয়া গতির কারণে লাগাতার দুর্ঘটনা ঘটছেই। অন্যমনস্ক হলেই অনিয়ন্ত্রিত গাড়ির গতির বলি হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বিগত দেড় বছরে শুধুমাত্র এই রাস্তাতেই ৫০জনের বেশি মারা গিয়েছেন। দুর্ঘটনার সংখ্যাও প্রায় একশো ছুঁইছুঁই। জেলার অত্যন্ত ব্যস্ততাপ্রবণ রাস্তায় দুর্ঘটনার এই পরিসংখ্যান উদ্বেগ বাড়িয়েছে পুলিস প্রশাসনের। পুলিসের তরফ থেকে বিভিন্ন জায়গায় গার্ডরেল দিয়ে গাড়ির গতি কমানো হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও দুর্ঘটনায় নিয়ন্ত্রণ আনা যাচ্ছে না। অন্যদিকে, এই রাজ্য সড়ক ডাবল লেন করার দাবি জোরালো হচ্ছে।

    কৃষ্ণনগর পুলিস জেলা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৪ সালে কৃষ্ণনগর-করিমপুর রাজ্য সড়কের উপর চাপড়া, তেহট্ট, করিমপুর থানা এলাকায় মোট ৬৭টি দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত্যু হয় ৩৭জনের। ২০২৫ সালে এখনও পর্যন্ত মোট ২৩টি দুর্ঘটনায় ২৩জনের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ, দেড় বছরে প্রায় ৯০টি দুর্ঘটনায় ৬০জন প্রাণ হারিয়েছেন।

    কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার এসপি অমরনাথ কে বলেন, গাড়ির গতি কমানোর জন্য আমরা বিভিন্ন জায়গায় গার্ডরেল ও স্পিড ব্রেকার বসিয়েছি। সচেতনতার প্রচার করছি।‌ গাড়ি চালানোর সময় সাধারণ মানুষকেও সতর্ক থাকতে হবে।

    প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার সকালে করিমপুর সংলগ্ন কাঁঠালিয়া এলাকায় মর্মান্তিক পথদুর্ঘটনা ঘটে। কৃষ্ণনগর থেকে করিমপুরগামী বাসের সঙ্গে একটি চারচাকা গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ঘটনায় চালক সহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়। চারচাকাটি করিমপুর থেকে কৃষ্ণনগরের দিকে আসছিল। মাসখানেক আগে দোলপূর্ণিমার দিন চাপড়া থানার লক্ষ্মীগাছার চারাতলার কাছে কৃষ্ণনগর-করিমপুর রাজ্য সড়কের উপর দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে দুই শিশু ও চার মহিলা সহ সাতজনের মৃত্যু হয়। কৃষ্ণনগরের দিক থেকে আসা একটি বেপরোয়া চারচাকা গাড়ি পরপর দু’টি টোটোকে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই সাতজনের মৃত্যু হয়।‌ এছাড়াও, হামেশাই এই রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটছে। কখনও বেপরোয়া বাস, কখনও আবার লরির ধাক্কায় মৃত্যু হচ্ছে পথচারী কিংবা বাইক আরোহীর। গত বছর ১২ ডিসেম্বর চাপড়ার ছোট আন্দুলিয়া এলাকায় শিশু সহ পাঁচজন জখম হয়।‌ অধিকাংশ সময় দেখা যায়, অতীতে যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে পুলিস গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিলেও, অন্যত্র ঘটে যাচ্ছে নতুন দুর্ঘটনা।

    স্থানীয়দের দাবি, সমস্ত যানবাহনই এখানে বেপরোয়া গতিতে চলে। তার উপর এই রাস্তায় টোটো চলাচল করায় তা আরও দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে উঠেছে। কৃষ্ণনগর থেকে জলঙ্গি পর্যন্ত ৯৩কিলোমিটার রাস্তা মাত্র সাত-আট মিটার চওড়া। চাপড়ার বাসিন্দা মিজানুর বিশ্বাস বলেন, প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে কয়েক হাজার গাড়ি চলাচল করে। সাধারণত কৃষ্ণনগর-করিমপুর রাজ্য সড়কে গাড়িগুলি ১০০কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার চেয়েও বেশি গতিতে চলে। রাস্তা পারাপার করতে ভয় লাগে।

    উল্লেখ্য, কৃষ্ণনগর-করিমপুর রেলপথ চালু করার দাবি নদীয়াবাসীর দীর্ঘদিনের। কিন্তু সেই রেলপথের ভবিষ্যৎ অথই জলে। সময়ের সঙ্গে এই রেলপথের দাবি জোরালো হলেও তা শুধুমাত্র সমীক্ষার আড়ালেই থেকে গিয়েছে। রেলপথের বাস্তবায়ন হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই জেলার অন্যতম এই রুটের ব্যস্ততা পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। আর এটাই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই রাজ্য সড়কের দু’পাশে বিস্তীর্ণ চাষের জমি রয়েছে। তাই রাজ্য সড়ক চওড়া করে ডাবল লেন বানানোর দাবি করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
  • Link to this news (বর্তমান)