বিকাশ ভবন চত্বর স্তব্ধ করে আন্দোলন চলে না: হাইকোর্ট
বর্তমান | ২২ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: হাইকোর্টে বিচারপতির কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে হল বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলনরত চাকরিহারা শিক্ষকদের। বুধবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর বসু তাঁদের বিকাশ ভবন ছেড়ে অন্যত্র আন্দোলন করার মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন। বিকল্প জায়গা হিসেবে বিধাননগর মেলা গ্রাউন্ড বা সেন্ট্রাল পার্কের সুপারিশ করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, আন্দোলনকারীদের আচরণ যাতে শিক্ষকের মতো হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিক্ষাদপ্তরের কোনও কর্মী বা অন্য কেউ জখম বা বাধাপ্রাপ্ত হলে পুলিস ব্যবস্থা নিতে পারবে। এই অবস্থায় আজ, বৃহস্পতিবার থেকে বিকাশ ভবনের সামনের রাস্তা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
একাধিক কারণে চাকরিহারা শিক্ষকদের এই আন্দোলন ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছিল। বুধবারই মধ্যশিক্ষা পর্ষদ আন্দোলনের শীর্ষনেতা সহ ১০ জনকে শো-কজ করেছে। স্কুলের মাধ্যমে চিঠি পাঠিয়ে তাঁদের বলা হয়েছে, গেট ভাঙা থেকে শুরু করে পুলিসকে আক্রমণের ঘটনায় তাঁদের যুক্ত থাকতে দেখা গিয়েছে। কেন তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, উত্তর দিতে হবে তাঁদের। এই পরিস্থিতিতে আদালতের এহেন পর্যবেক্ষণ আন্দোলনের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দিল বলে ওয়াকিবহাল মহলের দাবি। বিচারপতি এদিন জানিয়ে দিয়েছেন, ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ জন নিয়ে আন্দোলন চলতে পারে। তাও রোটেশনের ভিত্তিতে (অর্থাৎ একই লোক টানা থেকে যেতে পারবেন না)। বিধাননগর পুলিস বায়ো টয়লেট সহ সব ব্যবস্থা করে দেবে। তবে বিকাশ ভবন ও সংলগ্ন চত্বরে রাস্তাজুড়ে আন্দোলন চালানো যাবে না।
আন্দোলনকারী দুই শিক্ষক থানায় হাজিরার নির্দেশ পেয়ে হাইকোর্টে দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, পুলিস যেন তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না করে। তাঁদের আইনজীবী সুদীপ্ত মৈত্রকে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, এই আন্দোলনের জন্য অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি? আইনজীবী বলেন, ‘১৫০০ জন আন্দোলনে শামিল ছিলেন। থানা এফআইআর করেছে দু’জনের বিরুদ্ধে।’ বিচারপতি তখন বলেন, ‘তাঁরা থানায় যাক। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিস কোনও গুরুতর পদক্ষেপ করতে পারবে না।’ রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিকাশ ভবনের গেট ভেঙে ফেলা, অন্তঃসত্ত্বা কর্মী সহ বহু কর্মচারীর আটকে পড়ার মতো আন্দোলনের নেতিবাচক দিকগুলি তুলে ধরেন। তখনই বিচারপতি আন্দোলনকারীদের ‘শিক্ষকের মতো আচরণ’ করার পরামর্শ দেন। তাঁরা এসএসসির সদর কার্যালয়ের সামনে কেন আন্দোলন করছেন না, সেই প্রশ্নও ওঠে। তবে এক্ষেত্রে রাজ্য সরকারকে কিছুটা ‘ধীরে চলো’ নীতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিচাপরতি।
এই অবস্থায় আন্দোলনের নেতৃত্ব বেশ ব্যাকফুটে। আদালতের বার্তার পর যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক চিন্ময় মণ্ডল বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশ আমরা মেনে চলব। পর্ষদের শো-কজের উত্তরও দেব।’ এদিন সন্ধ্যায় চার-পাঁচজন আন্দোলনকারী বিধাননগর উত্তর থানায় গিয়ে তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গে দেখা করেন। পুলিসের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়, গ্রেপ্তারি বা অন্য কোনও কড়া পদক্ষেপ এখনই করা হচ্ছে না।