নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: দক্ষিণেশ্বরে সিগন্যালে পাশাপাশি দাঁড়িয়েছিল দু’টি বাস। একটি বারাসত-কমলপুর রুটের। অন্যটি বারাসত থেকে উলুবেড়িয়া যাচ্ছিল। কমলপুরগামী বাসটির সামনের গেট লাগোয়া ধারের সিটে বসেছিলেন এক যাত্রী। কানে হেডফোন ছিল। জানালা দিয়ে কনুই সহ হাতের কিছুটা অংশ বাসের বাইরে বেরিয়েছিল । সিগন্যাল সবুজ হতেই ওই বাসকে দ্রুত গতিতে ওভারটেকের চেষ্টা করে উলুবেড়িয়াগামী বাসটি। সেই বাসের লুকিং গ্লাসের লোহার রডের ধাক্কায় কমলপুরগামী বাসের সামনের সিটে বসে থাকা যাত্রীর হাত ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ দক্ষিণেশ্বর মোড়ের এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। পুলিস জানিয়েছে, জখম যাত্রীর নাম নন্দলাল সাউ। বর্তমানে তিনি আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিস দু’টি বাসের চালককেই আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। যাত্রীদের অভিযোগ, এই রুটে প্রায়শই বাসের রেষারেষি চলে। পুলিসের সামনেই এসব চললেও কোনও পদক্ষেপ করা হয় না।
নন্দলালবাবুর বাড়ি জগদ্দলের মতিভবন এলাকায়। তিনি ধূলাগড়ের জালান কমপ্লেক্সে ফার্নিচার পালিসের কাজ করেন। এদিন সকালে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য টিটাগড়ে এসে বারাসত-কমলপুর রুটের বাসে ওঠেন। ওই বাসে তাঁর অন্যান্য সহকর্মীও ছিলেন। নন্দলালবাবুর এই অবস্থা দেখে বাসের মধ্যেও উত্তেজনা তৈরি হয়। যাত্রীরা ওভারটেক করতে চাওয়া বাসটিকে ধরার জন্য কমলপুর রুটের বাসকে জোরে চালাতে চাপ দেন। আবারও দ্রুত গতিতে পাশাপাশি এগতে থাকে দু’টি বাস। শেষ পর্যন্ত বালি ব্রিজের হাওড়া জেলার অংশে বারাসত-উলুবেড়িয়া রুটের বাসকে আটকানো হয়। ক্ষোভের মুখে পড়েন সেই বাসের চালক। বালি থানার পুলিস দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। জখম নন্দলালবাবুকে বেলুড়ের একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এদিন সন্ধ্যায় তাঁর হাতে অপারেশন হয়। ওই বাসে থাকা নন্দলালবাবুর সহকর্মী রতন দাস বলেন, ‘দক্ষিণেশ্বরের সিগন্যালে আমাদের বাস দাঁড়িয়েছিল। আমাদের বাসের কয়েক হাত পিছনে দাঁড়িয়েছিল ওই বাসটি। সিগন্যাল খুলতেই ওই বাসের চালক দ্রুত গতিতে সামনের দিকে এগনোর চেষ্টা করে। তখনই ঘটে যায় ভয়ঙ্কর ঘটনা। কী হয়েছে, বোঝার পরও পালানোর চেষ্টা করে বাসটি। আমাদের বাস তাড়া করে সেটিকে দাঁড় করায়।’ নন্দলালবাবুর শ্যালক লাল্টু সাউ বলেন, ‘জামাইবাবুর হাত কয়েক টুকরো হয়ে গিয়েছে। ডাক্তারবাবুরা সবরকম চেষ্টা করছেন। তবে হাত বাদ যেতে পারে—এমন আশঙ্কার কথাও শুনিয়ে রেখেছেন তাঁরা।’ নিজস্ব চিত্র