এই সময়: পাঞ্জাব থেকে উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড পার করে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে বিস্তৃত নিম্নচাপ অক্ষরেখা। আর তারই দৌলতে দক্ষিণবঙ্গ বুধবার রাতে হঠাৎই তুমুল ঝড় বৃষ্টির মুখে।
আলিপুর হাওয়া অফিসের রিপোর্ট অনুযায়ী এদিন সন্ধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, কলকাতা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং নদীয়ার আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছিল। রাত নটা নাগাদ প্রথমে দমকা হাওয়া এবং তার কিছুক্ষণের মধ্যেই তুমুল ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়ে যায় এই জেলাগুলোয়।
তবে ঝড় বৃষ্টির দাপট শুধু এই জেলাগুলোতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। হুগলি জেলারও বিস্তীর্ণ এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত যে দক্ষিণবঙ্গে এমনই খামখেয়ালি আবহাওয়া চলবে সেই পূর্বাভাস আগেই দিয়েছিল আলিপুর হাওয়া অফিস।
মঙ্গল ও বুধবার দুপুর পর্যন্ত মোটের ওপর শুকনোই কেটেছিল রাজ্যের দক্ষিণ ভাগের। আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি বজায় ছিল পুরো মাত্রায়। তবে, ঝড় বৃষ্টির মাধ্যমে ছন্দপতন ঘটল রাতেই।
আবহবিদরা জানাচ্ছেন, পাঞ্জাব থেকে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত যে নিম্নচাপ অক্ষরেখাটি বিস্তৃত হয়েছে প্রধানত তারই প্রভাবে বঙ্গোপসাগর থেকে বিপুল পরিমাণে জলীয় বাষ্প ঢুকতে শুরু করেছিল দক্ষিণবঙ্গে।
গত দু সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০° সেলসিয়াসের ঘরে না পৌঁছলেও দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমে জেলাগুলোর তাপমাত্রা মোটের উপর চড়াই ছিল। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করার জন্য ভূপৃষ্ঠ গরম হয়ে সংলগ্ন বায়ুস্তর উপরের দিকে উঠে যেতে শুরু করেছিল।
সেই শূন্যস্থান পূরণ করতেই দক্ষিণ দিক থেকে ছুটে আসছিল জলীয় বাষ্পে পরিপূর্ণ বাতাস। গরম হাওয়া এবং ভেজা বাতাসের সংমিশ্রনের ফলে ঝড় বৃষ্টির আবহ তৈরি হয়। তারপরই বুধবার রাতের এই ঘটনা। আবহবিদরা জানাচ্ছেন দুপুর পর্যন্ত মোটের ওপর আকাশ পরিস্কার থাকলেও বিকেলের দিক থেকে শুরু হয়ে যায় মেঘ তৈরির পর্ব। তারই পরিণতিতে এদিনের এই ঝড় বৃষ্টি।
রাত পর্যন্ত আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের কাছে যে রিপোর্ট এসেছে তার ভিত্তিতে বলা যায়, বিভিন্ন জেলায় ঘন্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার গতিতে দমকা হাওয়া হয়ে গিয়েছে, কোন কোন জায়গায় বাতাসের গতি ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়েছিল।
সাধারণত কেরালায় বর্ষাকাল নামার এক সপ্তাহ পর উত্তরবঙ্গে বর্ষা শুরু হয়। দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার নামে তারও দিন দশেক পর। মৌসম ভবনের পূর্বাভাস অনুযায়ী এবছর ভারতে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করতে চলেছে ২৭ মে নাগাদ - নির্ধারিত ১ জুনের চার দিন আগেই।
স্বাভাবিক কারণেই মনে হতে পারে, বুধবার রাতে দক্ষিণবঙ্গের এই বৃষ্টি বর্ষার শুরু হওয়ার আগের বৃষ্টি অর্থাৎ প্রাক বর্ষার বৃষ্টি কি না। আবহবিদরা অবশ্য এই বৃষ্টিকে তেমন বলতে নারাজ। তাঁদের মতে, এটা নিছকই নিম্নচাপ অক্ষরেখা প্রভাবিত বৃষ্টি।
বছরের এই সময়টা দক্ষিণবঙ্গের বাতাস অত্যন্ত শুকনো থাকে। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণও খুব বেশি থাকে। এই কারণেই এই সময়টা বজ্রবিদ্যুতের জন্যও আদর্শ বলে মনে করা হয়। বুধবার রাতেও ঠিক তাই হয়েছে। শুধু ঝড়ো বাতাস আর তীব্র বৃষ্টিই নয়, একই সঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রবল বজ্রপাতের শব্দও শোনা গিয়েছে।
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, অন্তত শুক্রবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়াগত পরিস্থিতি এমনটাই থাকার সম্ভাবনা খুব বেশি। দিনের বেলা আকাশ মেঘমুক্ত থাকলেও, রাতে অল্পক্ষণের মধ্যেই মেঘ জমে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে বিস্তীর্ণ এলাকার উপর দিয়ে।