• ‘জোর করে জমি নিলে বইবে রক্তগঙ্গা’, হুঁশিয়ারি কৃষকদের
    এই সময় | ২২ মে ২০২৫
  • এই সময়, বর্ধমান: ইকনমিক করিডর নিয়ে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবিতে বুধবার সকালে কৃষক ঐক্য মঞ্চের ডাকে খণ্ডঘোষ এলাকার কয়েকশো কৃষক ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলনের ডাক দিলেন খণ্ডঘোষ থানার বোঁয়াইচণ্ডী এলাকা থেকে। প্রতিবাদী কৃষকরা সাফ জানিয়ে দেন, প্রয়োজনে প্রাণ দিতেও রাজি। উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না–পেলে কোনও অবস্থায় কেউ জমি দেবেন না।

    খণ্ডঘোষ ব্লকের শিবরামবাটী, দৈয়র, সাধনপুর বোঁয়াইচণ্ডী, উখরিদ, কুলে গয়েশপুর, এনায়েতনগর— এই সমস্ত মৌজার কয়েকশো চাষি এ দিনের বিক্ষোভ আন্দোলনে অংশ নেন।

    চাষিদের দাবি, কোনও ধরনের আলোচনা ছাড়াই জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ বিঘা প্রতি প্রায় ৮ লক্ষ টাকা দরে জমি অধিগ্রহণের নোটিস পাঠিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এই সমস্ত মৌজায় শালি জমির দাম কাঠা প্রতি ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা। এ দিন চাষিরা যে সমস্ত জমিতে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ খুঁটি পুঁতেছিলেন, তা তুলে ফেলে দেন।

    বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক চাষি কবিরুল ইসলাম বলছিলেন , ‘আমারই তিন ফসলি জমি রয়েছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের মনে হলো সেই জমি নিয়ে নেবে, এটা কী ধরনের আইন? আমার সংসার কী ভাবে চলবে?’

    যোগ করলেন, ‘আমি যদি নিজে এই জমি বিক্রি করি, তা হলে এখনই কাঠা প্রতি ১২ লাখ টাকা পেয়ে যাব। সেখানে প্রায় ২০ বিঘা জমি ৮ লাখ টাকায় দিয়ে দেবো কেন? দরকারে মরতে হলে মরব, কিন্তু উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না–পেলে জমি থেকে সরব না।’

    আর এক চাষি কাজি বাবর বললেন, ‘রোজ দেখছি জাতীয় সড়কের লোকেরা এসে চেন ফেলে মাপজোক করছেন। খুঁটি পুঁতছেন। আজ ভদ্র ভাবে ওঁদের এমন করতে নিষেধ করেছি। ফের এলে অন্য ব্যবস্থা নেব। রক্ত ঝরলে, ঝরবে। ক্ষতিপূরণ না–পেলে জমি ছাড়ব না।’

    কৃষক ঐক্য মঞ্চের আহ্বায়ক শেখ শাজাহানের দাবি, ‘আমরা জেলাশাসককে হুঁশিয়ারি দিয়েই বলতে চাই, জোর করে জমি অধিগ্রহণ করতে এলে এখানে রক্তগঙ্গা বইবে। ৮ লাখ টাকা বিঘা প্রতি দর দিয়ে সেই জমি পুলিশ দিয়ে জোর করে দখল করতে এলে আমরাও বসে থাকব না চুপ করে।’

    বীরভূমের মোরগ্রাম থেকে খড়্গপুর অবধি ইকনমিক করিডর তৈরি করছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। নাম দেওয়া হয়েছে ১১৬–এ। বর্ধমান জেলার মধ্যে এই রাস্তা পড়বে ৬২ কিলোমিটার। ২০০ ফুট চওড়া হবে রাস্তা। জেলার মধ্যে এই রাস্তা তৈরির জন্য প্রায় ৪৪৫ হেক্টর জমির প্রয়োজন।

    খণ্ডঘোষ ব্লকের ১৫টি, গলসি–২ ব্লকের পাঁচটি, বর্ধমান–১ ব্লকের পাঁচটি, ভাতারের ন’টি, মঙ্গলকোটে সাতটি, কেতুগ্রাম–১ ব্লকের পাঁচটি মৌজার জমি নেওয়া হবে। জমি হস্তান্তরের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নোটিস পাঠানো হয়েছে কৃষকদের।

    কৃষক সভার রাজ্য কমিটির সদস্য বিনোদ ঘোষের বক্তব্য, ‘আমরা কৃষকদের পাশে আছি। এ ভাবে জোর করে দুই অথবা তিন ফসলি জমি কেড়ে নেওয়া যাবে না। উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়েই জমি নিতে হবে।’

    খণ্ডঘোষ ব্লকের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অপার্থিব ইসলামের বক্তব্য, ‘চাষিদের দাবির প্রতি আমাদেরও সমর্থন আছে। তবে এ–ও বলব, কারও প্ররোচনায় পা না–দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে ভরসা রাখুন। মা-মাটি–মানুষের সরকার চাষিদের কোনও ক্ষতি হতে দেয়নি, ভবিষ্যতেও দেবে না। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ চাইলেই এ ভাবে জমি নিতে পারবে না। আগে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের টাকা চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করতে হবে।’

    জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে জমি ব্যবহার করার কোনও অনুমতি দেওয়া হয়নি। এখনও পর্যন্ত কোনও টাকা জেলা প্রশাসনের কাছে জমা করেননি। আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিষয়েও আলোচনা হয়নি। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের হিসেব অনুযায়ী, বর্তমান নোটিসের ভিত্তিতে কৃষকদের দিতে হবে ৩৫৮ কোটি টাকা। এর পরে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়লে তা প্রায় ৯০০ কোটিতে গিয়ে দাঁড়াবে।

  • Link to this news (এই সময়)