• ‘রাজনীতিতে হয়, পুলিশেও গ্রুপবাজি!’ প্রশাসনিক বৈঠকে উষ্মাপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর
    এই সময় | ২২ মে ২০২৫
  • এই সময়, শিলিগুড়ি: রাজনৈতিক নেতাদের মতো পুলিশও যদি লবিবাজি বা গ্রুপবাজিতে নেমে পড়ে, তা হলে তিনি যে কোনও ভাবেই বরদাস্ত করবেন না, সেটা স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

    বুধবার শিলিগুড়ির অদূরে ফুলবাড়িতে রাজ্য সরকারের উত্তরবঙ্গের প্রশাসনিক ভবন উত্তরকন্যায় আয়োজিত প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী কোচবিহারের পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্যের সামনেই জেলা পুলিশে ‘লবিবাজি’র প্রসঙ্গ তোলেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে রাজ্য পুলিশে কার্যত তোলপাড় পড়ে গিয়েছে।

    মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, কোচবিহারের পুলিশ সুপারই জেলার ডিএসপি (হেড কোয়ার্টার্স) চন্দন দাসকে কোনও কাজ করতে দিচ্ছেন না। তিনি প্রতিদিন কার্যত অফিসে এসে চা খেয়ে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। ‘লবিবাজি’র কারণেই এই পুলিশকর্তা কাজ করতে পারছেন না বলে সন্দেহ মুখ্যমন্ত্রীর।

    উষ্মা প্রকাশ করে তিনি জানান, জেলার আইন–শৃঙ্খলা যাঁদের দেখার কথা, সেই পুলিশেরই একটি অংশ রাজনৈতিক নেতাদের মতো লবিবাজিতে নেমে পড়ছে।

    এ দিন প্রশাসনিক বৈঠকে আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে আচমকাই মমতা জানতে চান, কোচবিহারে চন্দনবাবু বলে কেউ চাকরি করেন কি না। তার পরেই সরাসরি কোচবিহারের এসপি–র উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দেন।

    মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘হেড কোয়ার্টারকে আপনি কোনও কাজ করতে দেন না।’ দৃশ্যত বিব্রত পুলিশ সুপার অস্বীকার করার চেষ্টা করলেও মুখ্যমন্ত্রী জোর গলায় বলেন, ‘না, উনি কোনও কাজ করেন না। আপনিই তাঁকে কোনও কাজ করতে দেন না।’

    বিস্মিত মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেন, ‘পুলিশই যদি নিজেদের মধ্যে গ্রুপ তৈরি করে ফেলে, তা হলে সাধারণ মানুষ বাঁচবে কী করে?’ ওই পুলিশ আধিকারিককে দিনহাটা, শীতলখুচির মতো এলাকায় কাজে লাগানোর নির্দেশ দেন তিনি। জেলায় সীমান্ত এলাকায় কাজের সুযোগ দিতেও নির্দেশ দেন।

    খানিকটা স্বগতোক্তির ঢঙে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশ কি নিজেদের মধ্যে গ্রুপ করে? রাজনৈতিক নেতারা করে। আমরা সেটাই জেনে এসেছি এতদিন।’ ওই আধিকারিককে কেন এ দিনের প্রশাসনিক বৈঠকে ডাকা হয়নি, তা নিয়েও পুলিশ সুপারের কাছে কৈফিয়ত চান মমতা।

    পুলিশের একটি সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, রাজ্য পুলিশে এই গ্রুপবাজি দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। ‘প্রোমোটি আইপিএস’ ও ‘ডিরেক্ট আইপিএস’ অফিসারদের মধ্যে টানাপড়েন থাকেই। সেখানে অনেক সময়ে নিচুতলার পুলিশের একাংশও জড়িয়ে পড়েন।

    এ ছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রভাবশালীর ঘনিষ্ঠ পুলিশ অফিসারদের মধ্যেও গ্রুপবাজির অভিযোগ ওঠে। বাম আমলেও পুলিশের এই লবিবাজির অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনিক ভাবে মাঝেমধ্যে কড়া বার্তা দেওয়া হলেও এই লবিবাজি বা গ্রুপবাজি দূর করা সম্ভব হয়নি।

    তবে এ ভাবে প্রকাশ্যে পুলিশে গ্রুপবাজির কথা মুখ্যমন্ত্রীই বলে দেওয়ায় আগামী দিনে নিচুতলার পুলিশ মহলে কী প্রভাব পড়ে সেটাই দেখার। বিরোধীরা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলছেন, ‘উনিই পুলিশমন্ত্রী। উনিই যদি বলেন, পুলিশে গ্রুপবাজি চলছে, তা হলে তো ব্যর্থতার দায় ওঁর এবং ওঁর পুলিশকর্তাদেরই। তাঁরা কি এই দায় নিয়ে পদত্যাগ করবেন?’

  • Link to this news (এই সময়)