সঞ্জয় চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি
বাংলার কাজে নাক না-গলানোর পরামর্শ দিয়ে সিকিমকে সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিবেশী রাজ্য সিকিম এখন নানা কারণে বাংলার মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা বাড়িয়েছে সিকিমের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ১৪টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি হয়েছে প্রতিবেশী ওই রাজ্যে।
সিকিমের অধিকাংশ নদীর জল এ রাজ্য হয়ে বাংলাদেশে যায়। সিকিমে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি থেকে ছাড়া জলের খবর বাংলা অধিকাংশ ক্ষেত্রে আগাম না-পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এমনিতেই হিমবাহের বাঁধ ভাঙা জল থেকে বন্যার জেরে কালিম্পংয়ের তিস্তাবাজার এলাকা এখনও ভুগছে।
উত্তরবঙ্গে এখনই বর্ষা নেমে যাওয়ায় ফের বন্যার আশঙ্কায় ভুগছেন কালিম্পং এবং জলপাইগুড়ি জেলার বাসিন্দারা। কিন্তু এটাই সব নয়। বাংলার রাজনীতি নিয়েও সিকিম মাথা ঘামাচ্ছে বলে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর। এমনকী, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বিনিয়োগ করছেন সিকিমের শাসক দলের লোকেরা। এর পিছনে কেন্দ্রের শাসক দলের ইন্ধনও রয়েছে বলে সন্দেহ মুখ্যমন্ত্রীর।
সিকিম উত্তর পূর্বাঞ্চল কাউন্সিলের অষ্টম সদস্য রাজ্য। উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যের সঙ্গে সিকিমকে অন্তর্ভুক্ত করার পিছনে তাঁরই ভূমিকা রয়েছে বলে এ দিন জানান মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি জানান, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীকে তিনি অনুরোধ করেন সিকিমকে নর্থ ইস্ট কাউন্সিলে যুক্ত করে নেওয়ার জন্য। এদিন মুখ্যমন্ত্রী সাফ বলেন, ‘আমরা বন্ধুত্বের হাত বাড়িতে দেব, আর কেউ আমাদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলবে, এটা হবে না।
আগে নিজের রাজ্যকে ভালো করে সামলান। আমাদের ব্যাপারে নাক গলানোর চেষ্টা করবেন না। আমরাও যদি পাল্টা নাক গলাই, সেটা আপনাদের জন্যও ভালো হবে না। নোটবন্দি, রিয়েল এস্টেট ব্যবসা-আমরাও কিছু খবর রাখি।’
বন্যা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতার বিরুদ্ধেও সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, ‘বন্যা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় সরকার বরাদ্দ দেয় না। এমনকী, ফরাক্কা ব্যারাজ তৈরির সময়েও কেন্দ্রীয় সরকার ৭০০ কোটি টাকা দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, আজও সেটা মেলেনি।’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তখন আমাদের সরকার ছিল না। জ্যোতিবাবুর আমলের ঘটনা। দেবগৌড়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।’
ফরাক্কার ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের মালদা ও মুর্শিদাবাদ মিলিয়ে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার এলাকা দেখভাল করার কথা ছিল। এখন সেটা কমে কুড়ি কিলোমিটার হয়েছে। ফলে মালদা ও মুর্শিদাবাদে গঙ্গার দু’পাড়ের হাল অসহনীয় হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, গত ১৪-১৫ বছর ধরে রাজ্য সরকার বন্যা নিয়ন্ত্রণে কোনও কেন্দ্রীয় সহায়তা পায় না বলেও অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
উত্তরবঙ্গের বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলতে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে তিনি দিল্লি পাঠাবেন বলে জানান। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা কিংবা সিকিমকে সতর্ক করার বাইরে এ দিন প্রশাসনিক বৈঠকে উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আধিকারিকদের প্রস্তুতি নিতে বলেন।
ব্লক স্তর পর্যন্ত কন্ট্রোল রুম খোলার পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের মতো উত্তরবঙ্গেও ডিজাস্টার সিস্টেম চালু করার পরামর্শ দেন আধিকারিকদের। উত্তরকন্যা থেকেই এই ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম কাজ করবে।