এই সময়: সর্বদলীয় টিমের সদস্য হিসেবে তৃণমূলের পক্ষ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবারই বিদেশে রওনা হলেন। জেডিইউ–র সাংসদ সঞ্জয় ঝায়ের নেতৃত্বাধীন এই টিম জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে যাবে।
পহেলগামে জঙ্গিহানা, ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ভারতের অবস্থান এই দেশগুলিতে তুলে ধরবে এই সর্বদলীয় টিম। নয়াদিল্লি থেকে বুধবার রওনা হওয়ার আগে এই সর্বদলীয় প্রতিনিধি টিমের সদস্যদের হাতে দু’টি ‘ডসিয়ের’ তুলে দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক।
প্রথম ডসিয়েরে উল্লেখ করা হয়েছে ‘টকিং পয়েন্টস’, অর্থাৎ, বিভিন্ন দেশে গিয়ে এই টিম কী কী বিষয় তুলে ধরবে, তা উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয় ডসিয়েরে থাকছে বিস্তারিত সফরসূচি। বিদেশ সফরে বিভিন্ন দেশের কোন কোন রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে দেখা করতে হবে, তাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণও থাকছে।
সংসদীয় সূত্রের খবর, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর কেন ফেরত চাইছে ভারত, বিদেশে তার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেবেন এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব। এই প্রসঙ্গেই উল্লেখ করতে হবে— কাশ্মীর হলো আদি শঙ্করাচার্যের বাসভূমি। সেখানেই ইচ্ছাকৃত ভাবে বারবার হামলা চালাচ্ছে পাকিস্তান।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত তাদের পুরোনো লড়াই থামাবে না, এই মর্মে দেশের অবস্থানেও কোনও পরিবর্তন করা হবে না এবং শাসক–বিরোধী নির্বিশেষে গোটা ভারত যে এ ব্যাপারে একমত–এটাই বিদেশে জানাবেন সর্বদলীয় টিমের সদস্যরা। নয়াদিল্লি থেকে বিমান ধরার আগে সংবাদসংস্থাকে সঞ্জয় ঝা বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদ হলো সব থেকে বড় ইস্যু, এটাই পাকিস্তানের স্টেট পলিসি। বিশ্বের সামনে পাকিস্তানের মুখোশ খুলে দেওয়া হবে আমাদের কাজ।’
এই টিমের সদস্য সিপিএমের সাংসদ জন ব্রিটাসের কথায়, ‘আমাদের প্রতিনিধি দল প্রথমে জাপানের টোকিও পৌঁছবে। আমাদের বার্তা হলো, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বকে একত্রিত হতে হবে।’
পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের পাশাপাশি যে কোনও জঙ্গিবাদকে মোকাবিলা করে স্থায়ী শান্তির জন্য সারা বিশ্বকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হবে— ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু হওয়ার পরেই এক্স হ্যান্ডলে মন্তব্য করেছিলেন অভিষেক। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সর্বদলীয় টিমের নয়াদিল্লি থেকে রওনা হওয়ার ছবি এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেছেন।
এ দিনই তৃণমূলের ৫ সদস্যর প্রতিনিধি দল শ্রীনগরে পৌঁছয়। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই প্রতিনিধি দল পুঞ্চ, রাজৌরি–সহ জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গায় যাবে।
শ্রীনগরে পৌঁছে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ বলেন, ‘আমরা এসেছি সংহতি, সহমর্মিতা, সহানুভূতি জানাতে। পাকিস্তানের শেলিংয়ের ফলে জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলি সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব সম্প্রদায়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু এই মানুষের কথা কেউ বলছে না। এঁদের কথা আমরা দেশের সামনে তুলে ধরতে চাই। এই ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলিকে উপেক্ষা করা যাবে না।’
সূত্রের খবর, এ দিন জম্মু–কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এবং তাঁর বাবা, ন্যাশনাল কনফারেন্স সুপ্রিমো ফারুক আবদুল্লার সঙ্গেও সওয়া একঘণ্টা বৈঠক করেন জোড়াফুল সাংসদরা। প্রতিনিধিদল পাঠানোর জন্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানান ওমর।
পুঞ্চ ও রাজৌরিতে গিয়ে সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের কথা তৃণমূল সাংসদরা গোটা দেশের সামনে তুলে ধরবেন বলে জানিয়ে তাঁদের অভিনন্দনও জানান তিনি। ওই সব এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে তৃণমূলের প্রতিনিধিদলকে অবহিত করেন কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী। অদূর ভবিষ্যতে বাংলার সঙ্গে জম্মু–কাশ্মীর কী ভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে, সে ব্যাপারেও দু’পক্ষের কথা হয়েছে।