আগামী ১৪ জুন নিট-ইউজির ফল বেরোবে। সামনের মাস থেকেই সারা দেশে শুরু হবে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির প্রক্রিয়া। এই অবস্থায় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের (এনএমসি) দাবি, দেশে ও বিদেশে অনেক ভুয়ো মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। প্রচুর টাকা দিয়ে যেখানে পড়াশোনা করার কোনও দামই নেই বাস্তবে।
সে সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করতে তাই একটি অ্যাডভাইজ়রি প্রকাশ করেছে এনএমসি। তাতে আতসকাচের নীচে থাকা কয়েকটি ভুয়ো মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে আশ্চর্যজনক ভাবে নাম রয়েছে হাওড়ার একটি প্রতিষ্ঠানেরও। অথচ সেখানে আদৌ এমবিবিএস পড়ানোর মতো কিছুই হয় না বলে দাবি প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের।
সোমবার সন্ধ্যায় জারি করা এনএমসি-র ওই অ্যাডভাইজ়রিতে বলা হয়েছে, ডাক্তারি শিক্ষার নিয়ামক সংস্থার অনুমোদন ছাড়াই দেশের অনেক কলেজ এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির নামে টাকা আদায় করছে ছাত্রছাত্রীদের থেকে।
আবার বিদেশের অনেক মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে যাদের পঠনপাঠন সংক্রান্ত মাপকাঠি এনএমসি-র নিয়ম অনুযায়ী অপর্যাপ্ত। এই দুই ধরনের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কেই এমবিবিএস–প্রত্যাশীদের সতর্ক ও সচেতন করতে অ্যাডভাইজ়রি জারি করা হলো বলে জানিয়েছেন এনএমসি-র আন্ডারগ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন বোর্ডের অধিকর্তা সুখলাল মিনা।
তিনি জানিয়েছেন, এমন ভুয়ো কলেজে কেউ ভর্তি হলে তার দায় এনএমসি নেবে না।এই প্রসঙ্গেই রাজস্থানের ঝুনঝুনুর সিংহানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাওড়ার উলুবেড়িয়ার অদূরে ফুলেশ্বরের সঞ্জীবন ‘মেডিক্যাল কলেজে’র নাম এসেছে, এনএমসি তদন্ত চালাচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে।
অভিযোগ, দেশের অনেক ভুয়ো মেডিক্যাল কলেজের মতো এই দু’টি প্রতিষ্ঠানও এনএমসি-র অনুমোদন ছাড়াই ছাত্রভর্তির ‘অফার’ দিচ্ছে ‘আন-অথরাইজ়ড মেডিক্যাল প্রোগ্রাম’-এ।
যদিও অ্যাডভাইজ়রিতে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের নাম দেখে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হাওড়ার সঞ্জীবন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অতিমারী–পর্বে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে পরিষেবা দেওয়ার জন্যে তাঁদের যা সুনাম রয়েছে, এনএমসি-র অবস্থানে তাতে আঁচ পড়তে পারে বলে বিরক্ত সংস্থার কর্তারা।
ফুলেশ্বরের ওই বেসরকারি হাসপাতালের অধিকর্তা শুভাশিস মিত্র বলেন, ‘সঞ্জীবন মেডিক্যাল কলেজ বলে কোনও প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব কোনও দিনই ছিল না। ২০১৮ থেকে ২০২১ পর্যন্ত আমাদের প্রতিষ্ঠানটিতে মালয়েশিয়ার লিঙ্কন মেডিক্যাল কলেজের ভারতীয় ক্যাম্পাস হিসেবে ডাক্তারি পড়ানোর ব্যবস্থা ছিল।
কলকাতা হাইকোর্টের একটি রায়েও এই ব্যবস্থায় সায় দেওয়া হয়েছিল। যে ২৪ জন পড়ুয়া এমবিবিএস পাশ করেছিলেন, তাঁদের সবাইকেই এনএমসি স্বীকৃতি দিয়েছিল।’ তিনি বিস্মিত, এত কিছুর পরেও কেন এখন এনএমসি আচমকা তাঁদের বদনাম করছে!
তাঁদের ক্ষোভের কারণ, ২০২১ সালে এনএমসি যখন নিয়ম করে যে কোনও বিদেশি মেডিক্যাল কলেজের এ দেশের ক্যাম্পাসে এমবিবিএস পঠনপাঠন চালানো চলবে না, তখন থেকেই মালয়েশিয়ার লিঙ্কন মেডিক্যাল কলেজের অধীনে ডাক্তারি পঠনপাঠন বন্ধ করে দেওয়া হয় ফুলেশ্বরের হাসপাতালে।
শুভাশিসের বক্তব্য, ‘তার পর আর কোনও দিনই মেডিক্যাল পড়ানো হয়নি আমাদের প্রতিষ্ঠানে। তার পরেও এনএমসি-র অ্যাডভাইজ়রিতে কেন আমাদের হাসপাতালের সঙ্গে মেডিক্যাল কলেজের নাম জুড়ে উল্লেখ করা হবে?’ তিনি জানান, প্রতিবাদ জানিয়ে এনএমসি-কে প্রতিষ্ঠানের তরফে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।
এনএমসি অবশ্য ছাত্রাছাত্রীদের যে ভুয়ো কলেজ নিয়ে আগাম সতর্ক করেছে, তার প্রশংসাই করছেন শিক্ষক-চিকিৎসকেরা। কারণ, প্রতি বছরই বহু এমবিবিএস–প্রত্যাশী ভুয়ো কলেজে ভর্তি হয়ে টাকা ও শিক্ষাবর্ষ, দুটোই বরবাদ করেন।
আবার ডাক্তারি পড়তে ইচ্ছুক বহু প্রার্থী বিদেশে এমন সব মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন, যেখানকার মাপাকাঠিকে মান্যতা দেয় না এনএমসি। ফলে সেখান থেকে পাশ করে দেশে ফিরে ডাক্তারির রেজিস্ট্রেশন অধরাই থেকে যায় অনেকের। তাই এ ব্যাপারে মনে বিভ্রান্তি বা সন্দেহ তৈরি হলে +৯১-১১-২৫৩৬৭০৩৩ নম্বরে যোগাযোগ করতেও বলা হয়েছে এনএমসি-র অ্যাডভাইজ়রিতে।