এই সময়: সাংগঠনিক জেলার পর এ বার ব্লক–টাউন। সেখানেও শাসকদল তার নেতৃত্ব পাল্টাবে।
তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলা স্তরে গত শুক্রবার, ১৬ মে রদবদল ঘোষিত হয়েছে। নির্বাচনী ফল, সাংগঠনিক কাজকর্ম, রাজ্য সরকারের জনপ্রিয় প্রকল্পের ধারাবাহিক প্রচার— এ সব মাপকাঠিতে এই সাংগঠনিক রদবদল হয়েছে বলে সোমবার দিল্লি যাওয়ার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে জানিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি ঘোষণা করেছেন, জেলা স্তরে এই রদবদলের পর ব্লক–টাউন স্তরেও সাংগঠনিক রদবদল হতে চলেছে। তৃণমূলের একাধিক সাংগঠনিক নেতৃত্বের পর্যবেক্ষণ— ব্লক–টাউন স্তরের রদবদল সাংগঠনিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
কারণ, নিচু তলায় তৃণমূলের নির্বাচনী সংগঠন, নির্বাচনী রণকৌশল, দলীয় প্রচার সফল ভাবে বাস্তবায়ন— এ সবের দায়িত্ব ব্লক–টাউন নেতৃত্বের কাঁধে থাকে। এই নেতৃত্ব একেবারে বুথ স্তরের সাংগঠনিক কাজ মনিটর করেন।
যে কারণে মাথার উপরে সাংগঠনিক জেলা সভাপতি, চেয়ারম্যান থাকলেও ব্লক–টাউন নেতৃত্ব তৃণমূল স্তরে কাজ করেন সংগঠনের চালিকাশক্তি হিসেবে। দলের ব্লক–টাউন নেতৃত্ব পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও পারফরম্যান্স মূল মাপকাঠি হতে চলেছে বলে তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য।
দিল্লি যাওয়ার পথে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার বলেছিলেন, ‘বিশদ পর্যালোচনা, সবার সঙ্গে আলোচনা করে ব্লক–টাউন স্তরের নেতৃত্বে প্রয়োজনীয় রদবদল হবে।’ তৃণমূলের এক সাংগঠনিক জেলা সভাপতির কথায়, ‘রাজ্যের ৩০০–র বেশি ব্লকের নেতৃত্ব এবং শতাধিক টাউন নেতৃত্বের বিগত দিনের কাজের পর্যালোচনা করা বিশাল একটি প্রক্রিয়া।
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশিত হওয়ার কয়েক মাস পর থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। একটি ভোটকুশলী সংস্থা এই পর্যালোচনা করার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে।’ অভিষেক গত ১৫ মার্চ তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের প্রায় সাড়ে চার হাজার নেতা–কর্মীকে নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছিলেন।
সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সব ব্লক সভাপতি, টাউন সভাপতি। ওই বৈঠকে অভিষেক নির্দিষ্ট ভাবে তথ্য দিয়ে জানিয়েছিলেন যে, রাজ্যে প্রায় ৮০ হাজার বুথের মধ্যে ১৫–২০ হাজার এমন বুথ রয়েছে, যেখানে ধারাবাহিক ভাবে ৫০ এর চেয়ে বেশি ভোটের ব্যবধানে হেরে যাচ্ছে জোড়াফুল।
এ সব বুথের অবস্থান শহর ও গ্রাম, দুই এলাকাতেই। তৃণমূলের সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা এক নেতার কথায়, ‘যে সব ব্লক অথবা টাউন সভাপতির এলাকায় এমন বুথের সংখ্যা বেশি, সে সব জায়গায় নেতৃত্ব বদলের সম্ভবনা রয়েছে। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এমন ব্লক রয়েছে।’
আসন্ন রদবদল নিয়ে তৃণমূলের আর এক নেতার পর্যবেক্ষণ, ‘যে সব টাউন সভাপতির এলাকায় পুরভোটে দল সাফল্য পেয়েছে কিন্তু লোকসভা ভোটে দল লিড পায়নি, সে সব জায়গাতেও বদলের সম্ভাবনা। যেমন, ঝাড়গ্রাম পুরসভা তৃণমূলের দখলে থাকলেও লোকসভা ভোটে সেখানকার অধিকাংশ ওয়ার্ডে বিজেপি লিড নিয়েছে।’
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে এমন ঘটনা ঘটেছে রাজ্যের বহু পুর এলাকায়। এ রকম খারাপ পারফরম্যান্সে কারণে একঝাঁক টাউন সভাপতি পদ খোয়াতে পারেন বলে তৃণমূলের একাধিক নেতার বক্তব্য। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে রাজ্যের ১০২টি বিধানসভায় তৃণমূল পিছিয়েছিল।
তার মধ্যে বিজেপি লিড নিয়েছিল ৯০টি বিধানসভা আসনে আর বাম–কংগ্রেস ১২টি বিধানসভা আসনে এগিয়েছিল। ওই সব বিধানসভা কেন্দ্রে দলের যে সব ব্লক–টাউন সভাপতি আছেন, তাঁদের কাজকর্ম নিয়ে সবিস্তার আলোচনা তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব করেছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর।
তৃণমূলের এক প্রবীণ বিধায়কের কথায়, ‘ব্লক স্তরে প্রয়োজনীয় রদবদল নিয়ে বিধায়করা প্রস্তাব দিয়েছেন। একটি ভোটকুশলী সংস্থার রিপোর্টও রয়েছে। তা ছাড়া রয়েছে সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নিজস্ব মূল্যায়ন।’ তাঁর সংযোজন, ‘বিশদে পর্যালোচনা করেই রদবদল হওয়ার সম্ভাবনা। যাতে প্রধান মাপকাঠি হতে চলেছে নির্বাচনী ও সাংগঠনিক পারফরম্যান্স।’